ছোট্ট আনিকার কি এমন ছবি হয়ে যাওয়ার কথা ছিল? দু'দিন আগেও ঘরজুড়ে কত উচ্ছল ছুটে চলা ছিল তার। হয়তো স্কুল থেকে ফিরে বাবা-মার কাছে রকমারি বায়না ধরতেন। বড় বোনের সঙ্গে করতো খুনসুটি। কখনও বা নিজের প্রিয় সাইকেলটায় ঘর মাতিয়ে রাখতো। কিন্তু এসব করার মানুষটি স্কুল ছুটির আগেই ছুটি নিয়েছে জীবন থেকে। মাত্র ১০ বছরেই থমকে গেলো জীবনের চাকা।
প্রিয় সন্তান, বুকের ধনকে হারিয়ে নির্বাক বাবা। মেয়ের হাত ধরে স্কুলে পৌঁছে দেয়ার তাড়া নেই আর। চোখের সামনে ভাসছে মেয়ের কতশত স্মৃতি।
আনিকার বাবা বলেন, ‘আনিকার শরীর বেশি পুড়েনি। কিন্তু ধোঁয়ায় শরীর কালো হয়ে গিয়েছে। ধোঁয়া আর তাপের কারণে আনিকার মৃত্যু হয়েছে। দুইদিন আগেই নতুন জামা কিনে নিয়ে এসেছিলো। এখন এ জামা পড়ার মানুষ নেই।’
বাড়ি জুড়ে এখন স্বজনদের আহাজারি। আকস্মিক দুর্ঘটনায় ছোট্ট আনিকা অন্তিমে হারিয়ে যাবেন এমনটা হয়তো ভাবনাতেও ছিল না। তারা জানান, আনিকাকে হারিয়ে তার বাবা-মা, দুই বোনের অবস্থা শোকে পাগলপ্রায়।
মাইলস্টোনের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী বড় বোন সুমাইয়া, বিমান বিধ্বস্তের আগেই বাড়ি ফেরায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। কিন্তু অগণিত মৃত্যুর মিছিলে যুক্ত হয় ছোট বোনের নাম। যাকে ছাড়া আজ বড্ড একা, নিঃসঙ্গ।
আনিকার বড় বোন বলেন, ‘আমি পরীক্ষা দিয়ে বাসায় আসার পরই জানতে পারি প্লেন ক্র্যাশের কথা। সাথে সাথে আমি স্কুলে গিয়েছিলাম কিন্তু আমাকে ঢুকতে দেয়নি। তখন আমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলাম।’
সোমবারের বিমান দুর্ঘটনায় ঝলসে গেছে আদুরে ফুলেরা। এমনই আরেকজন তৃতীয় শ্রেণির বোরহানউদ্দিন বাপ্পী। পুড়ে যাওয়ার তীব্র যন্ত্রণায় জীবনের কাছে হার মানতে হয় তাকেও।
সেদিনের ভয়াবহতায় পুড়ে যায় তার শরীর, স্কুল ড্রেস, আইডি কার্ড। ছেলের প্রথম আর দ্বিতীয় শ্রেণির পুরনো আইডি কার্ডই এখন বাবার হাতে স্মৃতি।
বাপ্পীর বাবা বলেন, ‘আমার ছেলের ৩৫ শতাংশ পুড়েছে। কিন্তু শ্বাসনালী পুড়ে যাওয়ার কারণে মারা গিয়েছে। আমার ভাই ১০০ শতাংশই পুড়ে গেছে।’
যে বয়সে কাগজের বিমান ওড়াবার কথা ছিল ছোট্ট শিক্ষার্থীদের, তখনি কিনা মহা পতঙ্গের রূপ নিয়ে বিধ্বস্ত বিমানের আঘাতে যেন এক নিমিষে মেঘের ওপারে চলে গেল তারা। আজ আর কোন তাড়া নেই স্কুল-কোচিংয়ে যাওয়ার, টিফিনে ভাগ বসানো, কিংবা হোমওয়ার্কের চাপ।