কেউ হয়তো কথাগুলো আমাদের বলেনি তবু সাতদিনে যতবার সংবাদপত্র, টেলিভিশন অথবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দেখেছি আমরা ওদের কথা, মনে মনে ঠিক শুনতে পেয়েছি। প্রশ্ন করেছি হে সৃষ্টিকর্তা গল্পটা কেনো অন্যদিনের মতো হলো না? কেনো এত নির্মমতার সাক্ষী হলাম আমরা?
পাঠশালার শোরগোলের মাঝে হঠাৎ বজ্রপাতের শব্দ। ঠিক যখন ওদেরই কেউ খেলছিলো ‘আকাশ থেকে নেমে এলো ছোট্ট একটা প্লেন, সেই প্লেনে বসে ছিলো লালটুক টুক ম্যাম।’ আচ্ছা এভাবেও যে প্লেন আকাশ থেকে নেমে এসে প্রাণ কেড়ে নেয় জানা ছিলো কি ওদের? জানা ছিলো কি আমাদের?
আর্তনাদ আহাজারিতে আর আগুনের কালো ধোঁয়ায় ছাই হয়ে গেলো মাইলস্টোন কলেজ। পেশাগত দায়িত্ব পালনে ততক্ষণে উপস্থিত সেনাবাহিনী ফায়ারসার্ভিস গণমাধ্যমকর্মীরাও। দায়িত্বের আড়ালে কোমল শিশুদের অগ্নিদগ্ধ দেহ অশ্রুসিক্ত করেছে তাদেরও।
৪৩ সোরাড মিসাইল রিজিমেন্টের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাহসিন হক চৌধুরি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি মানবিকতা ও মনুষ্যত্বের সর্বোচ্চ উদাহরণ তৈরির জন্য। আমরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দেখেছি রাস্তার মধ্যে বিভিন্ন মৃতদেহ পড়ে থাকতে যাদের হয়তো হাত পা বা বিভিন্ন অঙ্গ আলাদা হয়ে গিয়েছিলো। আমাদের ক্যাম্পের সদস্যরা ইউনিফর্ম খুলে মৃতদেহের ওপর বিছিয়ে দিয়েছিলেন৷ তারা বুঝাতে চেয়েছিলেন সবার ওপরে মানুষ সত্য। এর ওপরে আর কিছু নাই।’
এখন টিভির জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক গালিব ইবনে রিয়াজ বলেন, ‘যদিও পেশাদারিত্বের জায়গা থেকে আমাদের ভেঙে পড়তে হয় না কিন্তু আমি নিজেও একজন বাবা। আর নিজের সন্তানের কথা চিন্তা করে হলেও আমি হাসপাতালে পৌঁছানোর আগে নিজেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। শুরুতেই হাসপাতালে পৌঁছে একজন শিক্ষক ও দুইজন শিক্ষার্থীকে দেখি যাদের মাঝে একজনের হাত পুড়ে গেছে, শরীরের একটা অংশ পুড়ে গেছে। তাকে ব্যান্ডেজ করে রাখা হয়েছে।’
দিশেহারা হয়ে স্বজনেরা এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ঘুরে খুঁজে নিয়েছে নিজেদের সোনামণিকে। রাষ্ট্র পালন করেছে রাষ্ট্রীয় শোক, প্রার্থনা হয়েছে ধর্মীয় উপাসনালয়ে। বেড়েছে মৃত্যুর মিছিলও।