চারদিকে বুলেট আর বোমার শব্দ। হেলিকপ্টার থেকেও গুলি চলছে। রক্তে লাল হয়েছে পিচ ঢালা পথ। ভাইয়ের শার্ট, বন্ধুর শরীর। মায়ের আহাজারিতে লাল হয়েছে পুরো আকাশটাও। ততোক্ষণে মোহাম্মদপুরের সৈকত আর নেই। নেই যাত্রাবাড়ীর মেহেদী আর উত্তরার নাঈমা সুলতানা।
৩০ জুলাই ২০২৪। ততোক্ষণে হাজারটা পরিবার কাঁদছে। লাল রক্তের ক্ষত হাত, পা কিংবা কারো চোখ। ততোক্ষণে লাল সবুজের পতাকার সবুজ অংশও লাল হয়ে গেছে।
তারপর আস্তে আস্তে লাল হতে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রোফাইল ছবি গুলো। রক্তের রঙের সাথে মিলিয়ে লাল হয়ে উঠে প্রতিবাদের প্রতীক।
শিক্ষার্থীরা জানান, সরকারের শোক দিবসের বিপরীতে প্রতিবাদস্বরূপ প্রোফাইল লাল করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সরকারের প্রহসনমূলক স্বজন হারানোর বেদনার প্রতিবাদে জুলাই শহিদদের স্মরণে প্রোফাইল লাল করা হয় বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
এদিন সরকার ঘোষিত শোক দিবসকে প্রত্যাখ্যান করে শোকের কালো রং বাদ দিয়ে আন্দোলনকারী এবং জনপ্রিয় ব্যক্তিবর্গ, সাধারণ নাগরিক ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের একটি বড় অংশ এমনকি সাবেক সেনাপ্রধানও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাল প্রোফাইল ছবির মাধ্যমে কোটা আন্দোলনকারীদের সাথে সমর্থন জানা।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি বলেন, ‘এ লালটা আসলে লাল জুলাইকে সফল করেছে এবং একটা স্ফুলিঙ্গ তৈরি করেছে। আমরা যেটা বুঝতে পারি যে প্রোফাইল লাল করার মধ্য দিয়ে হাসিনা সরকার পুরো জাতির কাছ থেকে লাল কার্ড পেয়েছে। প্রবাসী শ্রমিকরাও প্রোফাইল লাল করেছে।’
রক্ত দেখেও যে চোখ দেখেনা, যে গুলি করে কালো ব্যাজে শোক পালন করে সেই সরকারকে দেখানো হয় লাল। ছাত্ররা লাল কাপড় দিয়ে চোখ মুখ বেধে প্রতিবাদ জানায় হাসিনা সরকারের গণহত্যার। দুপুর মুখে লাল কাপড় বেঁধে মৌন মিছিল করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
দুপুরে ঢাকায় ৬ সমন্বয়ককে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি দিতে আলটিমেটাম দেয় বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ। বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লাল ধারণ করে ৩১টি সংগঠনের পদযাত্রা ও বিক্ষোভ করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি এস এম ফরহাদ বলেন, ‘বারবার প্রেস ব্রিফে মিথ্যা বলেন, রাষ্ট্রীয় শোকের মিথ্যা নাটক করেন, তার মুখ এবং চোখের এ কথা বলার যে দ্বিচারিতা এটাকে আমরা লাল কাপড় বেঁধে রক্তাক্ত সিম্বল দিয়ে প্রকাশ করেছি। বেগম খালেদা জিয়া, ড. ইউনুস সকলের আমাদের সাথে যুক্ত হয় যা আমাদের মোটিভেট করে। আমরা এরপর ফিল্ড কর্মসূচীতে যেতে পারি।’
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সেক্রেটারি নাসির উদ্দিন বলেন, ‘সেদিন মানুষ দুইভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। যারা ফ্যাসিবাদের পক্ষে ছিলো তারা কালো ব্যাজ ধারণ করেছিলো। আর যারা ছাত্রদের পক্ষে ছিলো তারা লাল ব্যাজ ধারণ করেছিলো। সুতরাং এই এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলো।’
চারদিকে লাল পোশাক, লাল প্লেকার্ড, লাল হয়ে উঠে পুরো ফেসবুক। লাল যেন ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মনে। তাই তো বুলেটের বৃষ্টি থেমে থেমে চলে চট্টগ্রাম ও পঞ্চগড়ে।
অবশেষে এ লাল রক্তের বন্যাতেই ভেসে গেছে স্বৈরাচারী সরকার। সুকান্তের কবিতার মতই, এদেশের বুকে আঠারো এসেছে নেমে।