আইনি সংস্কার
ক) আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধন: ১৯৭৩ সালের আইনটি ন্যায়বিচারের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী সংশোধন করা হয়েছে। এতে গুমকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। অভিযুক্তের অধিকার সুরক্ষা, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগ, বিচার কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচার, অন্তর্বর্তীকালীন আপিল, সাক্ষী নিরাপত্তা এবং ভুক্তভোগীর ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থার বিধান যুক্ত হয়েছে।
খ) সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ, ২০২৫: এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে একটি স্বতন্ত্র জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে বিচারপতি নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
গ) দেওয়ানি কার্যবিধি সংশোধন: মৌখিক সাক্ষ্যের পরিবর্তে এফিডেভিটের মাধ্যমে সাক্ষ্যগ্রহণ, অনলাইন সমন জারি এবং মূল মামলার অধীনেই রায় কার্যকরের বিধান সংযোজন করে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনা হয়েছে।
ঘ) ফৌজদারি আইন সংস্কার: গ্রেপ্তার ও রিমান্ড প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করা হয়েছে। অভিযুক্তের অধিকারের নিশ্চয়তা, জেন্ডার সংবেদনশীলতা, তদন্তে জবাবদিহি ও মিথ্যা মামলার রোধের বিধান যুক্ত হয়েছে।
ঙ) মামলা-পূর্ব বাধ্যতামূলক মধ্যস্থতা: নির্দিষ্ট কিছু মামলায় বাধ্যতামূলক মধ্যস্থতার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। প্রতি জেলায় ১-এর স্থলে ৩ জন বিচারককে লিগ্যাল এইড অফিসে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
চ) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সংশোধন: তদন্ত ও বিচার শেষের সময়সীমা নির্ধারণ, ব্যর্থতার দায় নির্ধারণ, সাক্ষী সুরক্ষা, শিশু ধর্ষণ মামলার জন্য পৃথক ট্রাইব্যুনাল এবং পুরুষ শিশুর নির্যাতনকে অপরাধ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ছ) পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বিধিমালায় সংশোধনী: বাংলাদেশি পাসপোর্ট না থাকলেও বংশোদ্ভূত ব্যক্তির জন্মসনদ বা জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলে বিদেশ থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদন করা যাবে।
জ) সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫: পূর্ববর্তী আইনের নিপীড়নমূলক ধারাগুলো বাতিল করে নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে এবং দায়েরকৃত মামলাগুলোও বাতিল করা হয়েছে।
ঝ) বিবাহ নিবন্ধন বিধিমালা সংশোধন: জেন্ডার বৈষম্যমূলক বিধান বাতিল করে অনলাইনে বিয়ে ও তালাক নিবন্ধনের সুযোগ তৈরি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন
প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও ডিজিটালাইজেশন
ক) জুডিশিয়াল সার্ভিসের স্বাধীনতা: ‘বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস গঠন বিধিমালা, ২০২৫’ অনুযায়ী পদসৃজনের ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে। একইসঙ্গে পদায়নের স্পষ্ট বিধান প্রণয়ন করা হয়েছে।
খ) তথ্য ও সেবা কেন্দ্র: সব আদালত প্রাঙ্গণে তথ্য ও সেবা কেন্দ্র স্থাপন করে বিচারপ্রার্থীদের হয়রানি কমানো হয়েছে।
গ) কেন্দ্রীয়ভাবে আদালতের কর্মচারী নিয়োগ: জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় নিয়োগের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।
ঘ) দুর্নীতি প্রতিরোধ: বিচারকদের সম্পদ বিবরণী যাচাই এবং সাব-রেজিস্ট্রারদের তথ্য সংগ্রহ করে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
ঙ) প্রসিকিউশন মনিটরিং সেল: জুলাই-আগস্টে সংঘটিত অপরাধের বিচারপ্রক্রিয়া মনিটর করতে একটি বিশেষ সেল গঠন করা হয়েছে।
চ) বিচার কার্যক্রমের ডিজিটালাইজেশন: অনলাইনে সাক্ষ্যগ্রহণ, ই-ফ্যামিলি কোর্ট (ঢাকা-চট্টগ্রামে পরীক্ষামূলক), আদালত ব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ ডিজিটালাইজেশনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
ছ) আইন মন্ত্রণালয়ে ডিজিটালাইজেশন: ৫০ শতাংশ নথি ‘ডি-নথি’ পদ্ধতিতে নিষ্পত্তি এবং ‘প্রত্যয়ন বা সত্যায়ন’ সেবাকে শতভাগ অনলাইন করা হয়েছে।
জ) অনলাইন বেইলবন্ড: প্রথমবারের মতো জামিনের জন্য অনলাইন বেইলবন্ডের সফটওয়্যার প্রস্তুত করা হয়েছে। শিগগিরই এটি চালু হবে।
হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার
জেলা কমিটি ও কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে ১৫ হাজারের বেশি হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া, সাইবার আইনের অধীনে ৪০৮টি স্পিচ-অফেন্স মামলা; জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে ৭৫২টি মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর ফলে লক্ষাধিক ব্যক্তি হয়রানি থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
দৈনন্দিন কার্যক্রম
মন্ত্রীপর্যায়ে নিষ্পত্তিকৃত নথি: ১২৮৩টি (পূর্বে ৮৩৪টি)
সরকারি দপ্তরে আইনি মতামত: ৩৯১টি (পূর্বে ১৮০টি)
সনদ, দলিল ইত্যাদির সত্যায়ন: ১ লাখ ৫৯ হাজার ৫৪৪টি (আগের তুলনায় দ্বিগুণ)
অংশীজন সভা: রেকর্ড ১২টি
গঠিত কমিশনগুলোর (সংস্কার, গুম তদন্ত, জাতীয় ঐকমত্য) সাচিবিক সহায়তা। প্রথমবারের মতো বিধিমালা ও প্রবিধান কোডিফিকেশনের উদ্যোগ। এছাড়াও, ফ্যাসিস্ট আমলে নিয়োগকৃত আইন কর্মকর্তারা পালিয়ে যাওয়ায় ইতিহাসে সর্বাধিক সংখ্যক আইন কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে: ৪ হাজার ৮৮৯ জন সরকারি আইন কর্মকর্তা; ২৭৪ জন অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে; আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যথোপযুক্ত বিচারক ও প্রসিকিউটর; প্রধান বিচারপতিসহ ৫ জন আপিল বিভাগে, ২৩ জন হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি নিয়োগে সহায়তা।