ছলছল চোখে অভিমান, বুকে কষ্ট আর একরাশ আশা নিয়ে একটুখানি স্মৃতি খুঁজে পেতে উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলের সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছেন নিহতের স্বজনরা।
স্কুলটিতে বিমান বিধ্বস্তে নিহত হয় ১০ বছরের শিশু ফাতেমা আক্তার আনিশা। নিহত আনিশার মামা লিওন মীর তার একমাত্র ভাগনীর এক পাটি জুতা খুঁজে পেয়েছিলেন আগেই, এখনও আরেক পাটি খুঁজে চলেছেন। মানসিক চাপে জরাজীর্ণ হয়ে আছে আনিশার পুরো পরিবার।
নিহত আনিশার মামা লিওন মীর বলেন, ‘সেখানে যদি সিসিটিভি ক্যামেরা থাকে, সেই ক্যামেরার ফুটেজ দেখতে চাই, আমার ভাগনী কোথায় দাঁড়ানো ছিল সেটা শুধু দেখতে চাই। ওর শরীরে প্রচুর ধুলা, ঘাস এগুলো পেয়েছি। কাপড়-চোপড় দেখে বুঝতে পেরেছি— ও আসলে আগুনে পোড়েনি, তেলে পুড়েছে।’
কেবল হতাহতদের স্বজনরা নয়, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সব অভিভাবকরাও রয়েছে মারাত্মক মানসিক চাপে। একসময় যে শিশুরা কাগজের প্লেন বানিয়ে খেলতো, নীল আকাশের প্লেনের সঙ্গে শিশুরা দৌড়ে বেড়াতো, এখন সেই প্লেনের শব্দ শুনলেই ভয়ে আতকে উঠছে মাইলস্টোনের কোমলমতি শিশুরা।
অভিভাবকরা জানান, বাচ্চারা এখন বিমানের শব্দ শুনলেও ভয় পায়। নিহত ও আহতের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতাও জানিয়েছেন কেউ কেউ।
প্রাপ্ত বয়স্করাই কখনও কখনও মানসিক চাপ সামলে উঠতে পারেন না সেখানে সবেমাত্র যাদের জীবন শুরু তারা কেমন করে সামলে উঠবে এ মানসিক যন্ত্রণা? আর যারা বেঁচে নেই কী হবে তাদের পরিবার-পরিজনের? সন্তানের স্মৃতি হাতড়েই কি জীবন কাটবে তাদের?—বলছেন মায়েরা।
এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, চোখ বন্ধ করলেও তার মেয়ের চোখে ভেসে ওঠে সেই ভয়াবহ আগুনের চিত্র। তিনি এখন এ বিষয়টি নিয়ে এতটাই আতঙ্কিত যে, পরিবর্তন করতে চান মেয়ের স্কুল ও ছাড়তে চান এ এলাকা।
আরেক অভিভাবক জানান, এ ঘটনার পর থেকে মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে তার সন্তান। আগে অনেক কথা বললেও এ ঘটনার পর অনেকটাই চুপচাপ প্রকৃতির হয়ে গেছে তার সন্তান।
আর তাই এ দুর্ঘটনায় ট্রমাটাইজ হয়ে পড়া শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মানসিক স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে শুরু করা হয়েছে কাউন্সেলিং কর্মসূচি। মাইলস্টোন স্কুল কর্তৃপক্ষ-বিমান বাহিনী ও ব্র্যাকের যৌথ উদ্যোগে ৭ দিনের এ কর্মসূচি হয়েছে।
এ সময়টায় কীভাবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে হবে, নিজেরা কীভাবে ভালো থাকবেন, পরিবেশ-পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা যাবে, সেগুলো নিয়ে নানা রকম গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
এছাড়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অযৌক্তিক বা অপ্রাসঙ্গিক যেকোনো বিষয়ে আলোচনা এড়িয়ে যেতে বলা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মন খারাপ হয়, এমন কিছুই বলা যাবে না বলেও সতর্ক করা হয়েছে।