সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শিল্পকারখানার পাশাপাশি জনসংখ্যার চাপ বাড়ছে ঢাকার পাশের উপজেলা সাভারে। এতে ভরাট করা হচ্ছে নদী-খাল, জলাশয় এবং খালি জায়গা; দূষণ বেড়েছে বায়ু, পানি আর মাটিতে।
এ পানির মধ্যে সম্প্রতি ভয়াবহ মাত্রায় ‘সুপারবাগ’ এর সন্ধান পেয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. শুভ্র কান্তি দে, সহকারী অধ্যাপক নাদিম শরীফ ও তার দল। সম্প্রতি বিশ্ব বিখ্যাত নেচার পাবলিশিং গ্রুপের ‘এনপিজে ক্লিন ওয়াটার’ জার্নালে তাদের গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে।
গত তিন বছর ধরে সাভারের ৮টি পানির উৎস পরীক্ষা করেন তারা। সেখানে থাকা ৫০টি নমুনার সবগুলোতেই ডায়রিয়ার সুপারবাগ জীবাণু রয়েছে।
মূলত যেসব ব্যাকটেরিয়া তিন বা ততোধিক শ্রেণির অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ করতে পারে, তাদের বলে সুপারবাগ। এসব জীবাণু দেহে ঢুকলে চিকিৎসায় রোগ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। আছে মৃত্যু ঝুঁকিও।
জাবি মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নাদিম শরীফ বলেন, ‘৮ ধরনের সারফেস ওয়াটার থেকে আমরা নমুনাগুলো নিয়েছি। অ্যান্টিবায়োটিক টেস্ট করে সেখানে ১৫০টির মতো অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স আইসোলেট পাওয়া গেছে। সেখানে ডায়রিয়া সৃষ্টিকারী প্যাথোজিন ছিল।’
প্রাকৃতিক পানির বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে রোগসৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার ৯৯ শতাংশের বেশি মিল পেয়েছেন গবেষকরা।
তারা জানান, হাসপাতাল, বাসাবাড়ি এবং কলকারখানার বর্জ্য ছাড়াও কৃষি জমি, পোলট্রি খামার আর মাছ চাষে ব্যবহৃত ফিড, বিভিন্ন রাসায়নিক সরাসরি নদী, বিল ছাড়াও পুকুরের পানিতে মিশে যাচ্ছে। ফলে প্রাকৃতিক এসব উৎসে সুপারবাগ ছড়িয়ে পড়ছে।
সুপারবাগ ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে নাদিম শরীফ বলেন, ‘যেহেতু অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স ডায়রিয়াগুলো আছে। সেজন্য আগে ৫ থেকে ৭ দিনে যে ডায়রিয়া সেরে যেত এখন তা সারতে ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগবে।’
সাভার অঞ্চলের ৪০ শতাংশ মানুষ রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত। এর বাইরে ৩২ থেকে ৩৫ শতাংশ মানুষ বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন।
গবেষকরা জানান, মূলত এ অঞ্চলের পানির উৎস দূষিত হয়ে যাওয়ায় বর্ষাকালে ডায়ারিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ে। এমন অবস্থায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে কড়াকড়ি আরোপের কোনো বিকল্প দেখছেন না গবেষকরা।
জাবি মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক শুভ্র কান্তি দে এ বিষয়ে বলেন, ‘আমাদের পরিবেশে যে পানির উৎস রয়েছে তা দূষিত হয়ে গেছে। হিউম্যান কমিউনিটিতে সারফেস ওয়াটারগুলো ছড়িয়ে পড়েছে এজন্য মানুষ বাধ্য হয়ে এ পানি ব্যাবহার করছে।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, ২০১৯ সালে বিশ্বে সুপারবাগের কারণে ১ দশমিক ২৭ মিলিয়ন লোকের মৃত্যু হয়েছে এবং সুপারবাগের পরোক্ষ ভূমিকায় মৃত্যু হয় আরও ৪ দশমিক ৯৫ মিলিয়ন মানুষের।