দেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত হলেই ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণ সম্ভব: ডিসিসিআই

ডিসিসিআই আয়োজিত আলোচনা সভা
দেশে এখন
0

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, অপরিকল্পিত নগরায়ন, এবং অসহনীয় যানজটের কারণে ঢাকা এখন বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠেছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সারা দেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা জরুরি। আজ (শনিবার, ২৩ আগস্ট) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিশেষজ্ঞরা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।

ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত আলোচনার সভার মূল প্রতিপাদ্য ছিল, ‘রাজধানী ঢাকার টেকসই উন্নয়নে বিকেন্দ্রীকরণ ও পরিবেশ সুরক্ষা।’ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন এবং জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. রিয়াজুল ইসলাম।

ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ‘দেশের জিডিপিতে ঢাকার অবদান ৪৫% হলেও, যানজটের কারণে প্রতিদিন ১৪০ কোটি টাকার কর্ম ঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। তিনি ঢাকার চাপ কমাতে প্রশাসনিক ও বাণিজ্যিক কাজগুলো আশেপাশের শহরে স্থানান্তরের ওপর জোর দেন।’

পরিবেশ, বন এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘দেশের জলবায়ু পরিবর্তন ঢাকার বিদ্যমান সমস্যাগুলোকে আরও প্রকট করছে। সারাদেশের টেকসইয়ের উন্নয়ন করতে হলে, তা সমাজ থেকে আসতে হবে, যেটা আমাদের মধ্যে বেশ অভাব রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘পলিথিন ব্যবহার কমাতে গত ১ বছরে অনেক ঝুঁকি মোকাবেলা করে সরকার বেশকিছু কাজ করেছে, এখন সরকারি অনেক সংস্থাও এগিয়ে আসছে এবং আশা করছি ভবিষ্যতে ভালো ফল পাওয়া যাবে। এ সময় পরিবেশ দূষণকারী শিল্প-কারখানা বন্ধ করতে শিল্প-উদ্যোক্তাদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।’

আরও পড়ুন:

উপদেষ্টা বলেন, ‘ঢাকায় জনসংখ্যা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নিয়ন্ত্রণ রাখা বেশ কষ্টসাধ্য এবং বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করতে ঢাকার আশেপাশের শহরগুলোকে স্যাটেলাইট শহর হিসেবে গড়ে তোলা জরুরি। পুরনো কাঠামো, লোকবল এবং প্রতিষ্ঠান নিয়ে কাজ করে নতুন বাংলাদেশ উপহার দেয়া বেশ কঠিন।’

এ সময়, সরকার এয়ার পিউরিফায়ারের ওপর আরোপিত ট্যাক্স অনেকাংশে কমিয়েছে বলে জানান উপদেষ্টা এবং তা ব্যবহারে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরের আশেপাশে ৪টি নদীসহ সারাদেশে ১৩টি নদী দখল ও দূষণ মুক্ত করতে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে এবং এ কাজে দাতা সংস্থাগুলো সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।’

রাজউকের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘টেকসই ঢাকা তৈরি করতে হলে পুরো বাংলাদেশকেই টেকসই করতে হবে, যা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি, কারণ কর্মসংস্থানের অন্যতম উৎস হিসেবে রাজধানী শহরের কোন বিকল্প উৎস নেই, এর উপর চাপ প্রতিনিয়ত বাড়ছে এবং ভবিষ্যতেও এটা কমার সম্ভাবনা প্রতিফলিত হচ্ছে না।’

এছাড়াও তিনি ঢাকার সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য সমন্বিত পরিকল্পনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং সকল উন্নয়ন কার্যক্রম একটি সংস্থার অধীনে আনার প্রস্তাব দেন।

এ মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্থপতি ইকবাল হাবিব। মূল প্রবন্ধে তিনি জানান, ঢাকার জনসংখ্যার ৩২% এখানে বসবাস করলেও সবুজায়নের অভাব এবং উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে জীবনযাপন হুমকির মুখে। তিনি ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণ, সুষম নগরায়ন, এবং গ্রামীণ জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের ওপর জোর দেন। তিনি নদী কমিশনের সক্ষমতা ও আইনি ক্ষমতা বাড়ানোর প্রস্তাবও করেন।

এছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি ড. আদিল মোহাম্মদ খান, রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সিনিয়র সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া, এবং বুয়েটের অধ্যাপক ড. মো. শামসুল হকসহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। বক্তারা ঢাকার উন্নয়নকে মহানগরের বাইরে নিয়ে যাওয়ার এবং ট্র্যাফিক জট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর জোর দেন।

ইএ