মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যর্থতা, বাকশাল গঠন, রাজনীতির মাঠে শূন্যতা ও চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ। জনমনে প্রশ্ন, কোন পথে যাচ্ছে দেশ?
রাষ্ট্রপতির দায়িত্বে থাকা জিয়াউর রহমান তার শাসনকে বেসামরিক করার উদ্দেশে গ্রহণ করেন ১৯ দফা কর্মসূচি। পরবর্তীতে ১৯৭৮ এর পহেলা সেপ্টেম্বর গঠন করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি।
বিভিন্ন সময় গণতান্ত্রিক আন্দোলন, ৯০ ও ২৪ এর মতো বড় দুইটি গণঅভ্যুত্থান পেরিয়ে ৪৭ বছরে দলটি। একাধিকবার সরকার গঠন করলেও গত দেড় যুগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় বাইরে। ক্ষমতার এমন উত্থান-পতন, দলের রাজনৈতিক দর্শনে কি কোনো পরিবর্তন এনেছে?
দীর্ঘ দেড় যুগ ক্ষমতার বাইরে থেকেও নিজেদের রাজনৈতিক দর্শনে কোনো পরিবর্তন আনেনি দলটি। বড় কোনো ভাঙন ছাড়াই ৪ যুগ টিকে আছে দলটি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা যার বড় কৃতিত্ব দিচ্ছেন খালেদা জিয়ার আপোষহীন নেতৃত্বকে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘দলের রাজনৈতিক দর্শনে পরিবর্তন প্রয়োজন হয়নি। কারণ মূল দর্শন হলো বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ।’
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদকে লক্ষ্য করেই অনড় অবস্থানে থাকবেন তারা।
আরও পড়ুন:
তিনি বলেন, ‘যা কিছু করা হচ্ছে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদকে কেন্দ্র করেই করা হচ্ছে। সুতরাং এখানে ওই সমস্যাটা আসেনি যে একবার সমাজতন্ত্র, একবার পুঁজিবাদ, একবার গণতন্ত্র বা ধর্মীয় বিষয় নিয়ে আমাদের কাজ করতে হয়নি। আমরা অটিতে যে বিষয়টিকে লক্ষ্য করে কাজ করেছি এখনো এটাই আমাদের লক্ষ্য।’
তবে দেড় যুগ সরকারে না থেকেও বড় ধরণের কোনো ভাঙ্গন ছাড়াই টিকে আছে দলটি। বর্ষীয়ান সাংবাদিক শফিক রেহমান এই সাংগঠনিক শক্তির কৃতিত্ব দিচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়ার আপোষহীন নেতৃত্বকে।
সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক শফিক রেহমান বলেন, ‘পার্টিকে ক্ষমতায় রাখলে ঐক্যবদ্ধ সহজ হয়। কিন্তু বিরোধী দল হিসেবে ঐক্যবদ্ধ রাখাটা কৃতিত্বের বিষয় এবং কষ্টসাধ্য দুঃসাধ্য ব্যাপার। বিএনপির সাফল্য সেখানেই। বিএনপিকে দুবার ভাঙার চেষ্টাও করা হয়েছিল। কিন্তু সেটাও সম্ভব হয়নি। বিএনপি টিকে আছে ঐক্যবদ্ধ দল হিসেবে। এটা টিকে আছে কারণ খালেদা জিয়ার সংযমী ভাষা, মার্জিত ব্যবহার ও পরমতসহিষ্ণুতা।’
বহুদর্শী এ বিশ্লেষক জানান, বিএনপিকে দল হিসেবে টিকে থাকতে হলে, ভিন্ন মতকে সহ্য করার ক্ষমতা অর্জন করতে হবে।
শফিক রেহমান বলেন, ‘পরমতসহিষ্ণুতা, ভিন্নমত-সহিষ্ণুতা, ক্ষমা করার দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে হবে। আপনি যদি প্রতিহিংসাপরায়ণ হন, ভিন্নমত সহ্য না করতে পারেন, একদলীয় শাসন করেন তাহলে কথায় শুধু বললে হবে না যে গণতন্ত্র চাই, উন্নয়ন চাই।’
কেবল ক্ষমতার পালাবদল নয়, বহুদলীয় গণতন্ত্র রক্ষায় বিএনপির অঙ্গীকারই, দলটিকে নিয়ে যেতে পারে অনন্য অবস্থানে।