জুলাই গণহত্যার বিচার: আলোচনায় দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল, সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষা

আইন ও আদালত
বিশেষ প্রতিবেদন
0

জুলাই-আগস্ট গণহত্যার বিচারকাজ দ্রুত এগিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একাধিক আদালতের দাবি তুলেছেন বিচারপ্রার্থীরা। কীভাবে ও কবে আরেকটি আদালত গঠন করা হবে সে এখতিয়ার সরকারের। চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, গণহত্যার বিচারকাজ পরিচালনার জন্য অন্তত দু'টি ট্রাইব্যুনাল প্রয়োজন। তবে আদালতের সংখ্যা নয়, বিচার এগিয়ে নেয়াই মূল কাজ বলে মনে করেন তিনি।

জুলাই-আগস্টে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠনের শ্লোগান পৌঁছে যায় সারাদেশে। রূপ নেয় ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে, যাতে প্রাণ যায় দেড় হাজার ছাত্র-জনতার।

ছাত্র-জনতার ঘোষিত এক দফায় ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সফল হয় গণঅভ্যুত্থান। পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। জোরালো হয় গণহত্যার বিচারের দাবি।

এর ধারাবাহিকতায় ট্রাইব্যুনালে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার পরপরই প্রশ্ন ছিল, গণহত্যার বিচার করতে কতটা সময় প্রয়োজন? আদৌ কি একের বেশি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা সম্ভব?

চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, '৫৬ হাজার বর্গমাইলজুড়ে অপরাধ হয়েছে। আমাদের আইনে বলা আছে যে, সরকার চাইলেই এক বা একাধিক ট্রাইব্যুনাল সেটআপ করতে পারবে। একইসাথে যখন একাধিক মামলার বিচার চলমান হবে তখন দুইটা ট্রাইব্যুনাল ভাগাভাগি করে মামলাগুলোর কার্য পরিচালনা করলে বিচারকাজ দ্রুত অগ্রসর হবে। এ ব্যাপারে আমরা সরকারের সাথে এরই মধ্যে কথা বলেছি, সরকারের রেসপন্সটা ইতিবাচক। আমি বিশ্বাস করি যে, সরকার হয়তো এই বিষয়ে একটা পজিটিভ সিদ্ধান্ত নিবেন।'

তিনি বলেন, 'বিচারগুলো একইসাথে দু'টি ট্রাইব্যুনালে শুরু হলে দ্রুত অগ্রসর হওয়া সম্ভব হবে। সেক্ষেত্রে সরকার চাইলে এখনই একটা ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারেন। এবং এখন গঠন করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে, যেন ট্রাইব্যুনালে নতুন যারা আসবেন তাদেরকে এখানে পুরো সিস্টেমের সাথে একটা অ্যাডজাস্টমেন্টের প্রশ্ন থাকবে, সেটা তারা হয়ে নিতে পারবেন।'

এ বিষয়ে সিনিয়র আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, 'সরকার যদি মনে করে যে, যে পরিমাণ মামলা আছে বা যে পরিমাণ মামলা সামনের দিকে হবে, তার ওপর ভিত্তি করে ট্রাইব্যুনাল সংখ্যা বাড়ানোর প্রয়োজন। সরকার তার নিজস্ব ইচ্ছাই এই ট্রাইব্যুনাল সংখ্যা বাড়াতে পারেন।'

আওয়ামী সরকারের আমলে তৎকালীন ট্রাইব্যুনালের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ও মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ ব্রিটিশ আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান। ট্রাইব্যুনালের কট্টর সমালোচক থেকে এখন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান পরামর্শক। তার কাছে প্রশ্ন ছিল, দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল কেন প্রয়োজন?

টবি ক্যাডম্যান বলেন, 'বিচার প্রক্রিয়াকে আরো কার্যকর ও স্বচ্ছ করার জন্য একটি সুসংগঠিত কাঠামো প্রয়োজন। এতে প্রথমে একজন একক বিচারক থাকবেন, যিনি সমস্ত প্রক্রিয়াগত বিষয় দেখবেন। এরপর তিনজন বিচারকের একটি ট্রায়াল প্যানেল মূল বিচারের দায়িত্ব নেবেন এবং সর্বশেষ একটি আপিল প্যানেল থাকবে। আমি মনে করি, ভবিষ্যতে দীর্ঘমেয়াদি বিচারিক কার্যক্রমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এবং তা যেন যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়, সেজন্য বিচার প্রক্রিয়াটি এমনভাবে গঠন করা উচিত। যা এসব চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম।'

দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠনে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সরকারকেই, তবে কীভাবে গঠন করা হবে ট্রাইব্যুনাল সেই বিষয়ে স্পষ্ট করেন চিফ প্রসিকিউটর প্রধান নিজেই।

তাজুল ইসলাম বলেন, 'সরকার আগের ট্রাইব্যুনাল যেভাবে গঠন করেছেন, এখানে যদি সুপ্রিমকোর্টের বিচারকরা কেউ আসেন তাহলে সুপ্রিম কোর্টের একটা অনুমতি লাগে। আর অন্যদের সরকার সরাসরি এখানে নিয়োগ দিতে পারেন। সুতরাং কোন প্রক্রিয়ায় যাবেন এটা সরকার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করলেই এটা হয়ে যাবে। প্রজ্ঞাপন জারি করাটাই হচ্ছে আইন মন্ত্রণালয়ের কাজ। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আইন মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করলেই ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়ে যাবে।'

এসএস