রাজধানীতে অ্যাপ ছাড়া রাইড শেয়ারিং হয়ে উঠছে নতুন ঝুঁকি

যাত্রীর অপেক্ষায় রাইডাররা
দেশে এখন
বিশেষ প্রতিবেদন
0

রাজধানীর গণপরিবহনের সমস্যা কমাতে শুরু হওয়া রাইড শেয়ারিং যেন এখন এক ভোগান্তির নাম। নানা কারণে দিন দিন অ্যাপ থেকে মুখ ফেরিয়ে চুক্তিতে চলাচল করছেন বাইক চালকরা। বাধ্য হয়েই দরদাম করে চলাচল করতে হচ্ছে যাত্রীদের। এতে উভয়েরই নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাইড শেয়ারিং নীতিমালা বাস্তবায়নের অভাবে সড়কে দেখা দিচ্ছে বিশৃঙ্খলা।

অ্যাপের মাধ্যমে রাইড শেয়ারিং প্রথম শুরু হয় ২০১১ সালে নিউইয়র্কে শহরে। ব্যাপক জনপ্রিয়তায় তা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের অন্যান্য বড় শহরেও। ঢাকায় অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং অ্যাপ চালু হয় আরও পাঁচ বছর পর।

২০১৬ সালে যাত্রী ও চালকদের জন্য এ সেবা নিয়ে আসে বিশ্বখ্যাত রাইড শেয়ারিং কোম্পানি উবার। উবারের সাফল্যে এ বাজার ধরতে চলে আসে পাঠাও, ওভাই, পিকমি ও সহজের মতো দেশিয় রাইড শেয়ারিং অ্যাপ।

ব্যস্ত ঢাকায় নগরজীবনের চলাচলকে সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করার যে আশা নিয়ে এসেছিল রাইড শেয়ারিং- সেখানে হঠাৎই যেন ছন্দপতন। স্বল্প দূরত্বেও অতিরিক্ত ভাড়া, ডিজিটাল পেমেন্টে চালক গন্তব্যে যেতে রাজি না হওয়ায় বেড়েছে বিপত্তি। আস্থা হারিয়ে ফেলছেন যাত্রীরাও।

যাত্রীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘অ্যাপে অপেক্ষা করতে হয়। যার পছন্দ অনুযায়ী যে আসবে তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এজন্য যখন জরুরি কাজ থাকে তখন এভাবে চলে যাই।’

গল্প আছে মুদ্রার ওপিঠেও। দেশজুড়ে অনলাইন রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মগুলোর শুরুতে অ্যাপের মাধ্যমে যাত্রী সেবা দিলেও কঠোর নজরদারির অভাবে ভেস্তে যেতে বসেছে অল্পদিনে জনপ্রিয়তা পাওয়া এ সেবা মাধ্যমটি। যাত্রীদের বিপদের সুযোগ বুঝে এখন অনেক চালকই চুক্তিতে যাচ্ছেন।

রাইডারদের মধ্যে একজন বলেন, ‘অ্যাপে কল না আসলে, কলের জন্য অপেক্ষা করে না। যাত্রী যখন আসে, অনেক যাত্রীই আছে যারা নিজেরা অ্যাপ ব্যবহার করে না। সামনে গাড়ি পাইলে জিজ্ঞাসা করে, যাবেন কি না। তখনই কন্ট্রাকে যাওয়া হয়।’

অ্যাপ বাদে চুক্তিভিত্তিক চলাচলে ট্র্যাকিংয়ের সুযোগ নেই। যা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে যাত্রী-চালকের জন্য। যার আভাস মেলে সংবাদ শিরোনামে।

ঢাকায় বহুদিনের সমস্যা- মিটারে যেতে চান না সিএনজি অটোরিকশা ও ট্যাক্সি ক্যাব চালকরা। এখন সেটি এসে জুড়েছে রাইড শেয়ারিং অ্যাপে। কিন্তু কেন অ্যাপে যে ভাড়া দেখায়- তাতে কেন চান না চালকরা?

অন্য একজন বলেন, ‘খুব জ্যামে পড়ে থাকলেও অ্যাপে ধরেন ১২৭ টাকা আসছে, পারলে সে আকে ২৭ টাকাই দেয়। কিন্তু এটা কন্ট্রাকে মারলে ১২৭ টাকার জায়গায় ১৫০ টাকা হবে।’

রাইড শেয়ারিং নীতিমালা বাস্তবায়ন করে রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলোকেও আনা উচিত জবাবদিহিতার মধ্যে। না হলে এর সমাধান পাওয়া মুশকিল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. এম শামসুল হক বলেন, ‘যারা এটার দায়িত্ব নিয়ে আছেন তারা রাইড শেয়ারের সংজ্ঞাটা জানেন কি না সন্দেহ আছে। যদি জানতেন তাহলে কিন্তু দায়িত্বটা নিতেন এবং সবচেয়ে বড় কথা হলো যারা দায়িত্বটা নিচ্ছেন না তারা আবার জবাবদিহিতার আওতায় আসছেন না। পুরো পৃথিবী এ অমিত সম্ভাবনাটাকে কাজে লাগিয়ে ব্যক্তিগত গাড়িকে কমিয়ে নিয়ে আসছে। সে জায়গাটার মধ্যে আমরা পুরো উদাসীন হয়ে থাকছি এবং একটা বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি হচ্ছে।’

বর্তমানে উবার, পাঠাও ও সহজসহ ১৫টি নিবন্ধিত রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান রয়েছে দেশে। এর মধ্যে অনেকে লাইসেন্স নিয়েও অবস্থা বিবেচনায় কার্যক্রম শুরু করেননি আর বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে লোকসানে। ফলে টিকে আছে মাত্র দুই থেকে তিনটি প্রতিষ্ঠান।

এসএস