রাজধানীতে ভয়ংকর হয়ে উঠেছে প্রকাশ্য খুন, প্রশাসনের জবাব 'পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে'

প্রতীকী ছবি
অপরাধ
বিশেষ প্রতিবেদন
0

গত কয়েক মাসে রাজধানীতে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যাকাণ্ড আতঙ্কিত করে তুলেছে নগরবাসীকে। পুলিশের হিসাবে, চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে গড়ে ঘটেছে ২০টি করে হত্যাকাণ্ড। কখনো ধারালো অস্ত্রের আঘাতে, কখনো পিটিয়ে কিংবা পাথর দিয়ে থেতলিয়ে মানুষ হত্যা হয়েছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। অনেক ঘটনায় উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের দায়সারা ভূমিকা নিয়ে জনমনে বাড়ছে ক্ষোভ ও অসন্তুষ্টি। যদিও এখনও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে দাবি পুলিশের।

৩১ মে দুপুরে রাজধানীর দারুস সালামে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় দুই যুবককে। গেল ৯ জুলাই বিকেলে মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী সোহাগকে পাথর দিয়ে থেতলিয়ে জনসম্মুখে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। গত ১১ আগস্ট এক বেসরকারি হাসপাতালের বেজমেন্টে গাড়ির ভেতরে পাওয়া যায় দুটি লাশ, যার রহস্য উন্মোচন হয়নি এখনো। ১৪ আগস্ট ভোরে একটি সীসা বারে খুন হোন এক যুবক। এসব অপরাধ ছাড়াও রাজধানীতে ধর্ষণ, ছিনতাই, ডাকাতি-চুরির মতো অপরাধ ঘটছে ।

রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় পথচারীদের দুশ্চিন্তার একটা বড় কারণ ছিনতাই। কেবল রাত নয়, যেকোনো সময়ই এই অপরাধের শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। একের পর এক অপরাধের ঘটনায় দিনের বেলাতেও চলাচলে আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ।

বাসিন্দারা জানান, প্রতিদিন কোনো না কোনো অপরাধের খবর আসছে। এগুলো অবশই আতঙ্কের বিষয়। এতে করে নিরাপত্তার অভাববোধ করছেন বলেও জানান ঢাকায় বসবাস করা বাসিন্দারা।

খোদ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের হিসেব বলছে, গেল জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত খুনের মামলা হয়েছে ১২১টি, ডাকাতি ৩৩টি, ছিনতাই ২৪৮টি, এবং ১ হাজার ৬৮টি চুরির মামলা হয়েছে। এ হিসেব প্রতি মাসে গড়ে খুনই হয়েছে ২০টি।

তবে কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পূর্বাপেক্ষা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে দাবি পুলিশ প্রশাসনের। খুব আতঙ্কিত হবারও কিছু নেই জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ‘ঢাকা মহানগর এলাকায় প্রতিমাসে গড়ে ২০টির মতো খুনের ঘটনা ঘটে। এর পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। তার মধ্যে পারিবারিক, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার এসব কারণ রয়েছে। একটি নবজাতকের মৃতদেহ পাওয়া গেলে সেটাও কিন্তু খুনের মামলা হয়।’

আরও পড়ুন:

অনেক ঘটনায় উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের নীরব ভূমিকা জনমানুষের মাঝে জন্ম দিয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা। কী পদক্ষেপ নিচ্ছে পুলিশ প্রশাসন?

মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ‘কোনো পুলিশ সদস্যের সামনে কোনো অপরাধের ঘটনা ঘটলে সেক্ষেত্রে যদি পুলিশ সদস্যের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ পাওয়া যায় সেটা অবশই আমরা আইন অনুযায়ী তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয়তার কোনো অবকাশ নেই।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বিধ্বস্ত পুলিশবাহিনী স্বরূপে ফিরতে পারেনি এখনও। ভেঙ্গে যাওয়া মনোবল ও ভবিষ্যৎ রাজনীতির ভাবনা পুলিশ সদস্যদের মাঝে উদাসীনতা ও সমন্বয়হীনতা তৈরি করছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘এ এক বছরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কতটা তারা বাস্তবতার নিরিখে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ, বাস্তবায়ন এবং তা প্রয়োগ করার উদাহরণ তৈরি করতে পেরেছে। আইন প্রয়োগ করতে গিয়ে কোথাও কোথাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিজেরাই নিরাপত্তা সংকটে পড়ছে। কোনও একটা অপরাধ ঘটলে এবং অপরাধীর কোনও রাজনৈতিক পরিচয় থাকলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সরকার উভয়ই একটা উভয়সংকটে পড়ে যায়।’

তবে অপরাধ প্রতিরোধে পুলিশকে সহায়তার পাশাপাশি সামাজিক শক্তিকেও একত্রিত হতে হবে হবে বলে মনে করেন এই অপরাধ বিশেষজ্ঞ।

ইএ