আজকের আকেরবিকে বোঝার আগে ফিরে যেতে হবে তার অতীতের অন্ধকারে। ভিজলোলো প্রেদাবিসসি নামের একটি ছোট্ট গ্রামে জন্ম নেওয়া আকেরবির জীবনটা শুরু থেকেই সহজ ছিল না। বাবা ছিলেন তার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা, কিন্তু একইসঙ্গে সবচেয়ে কঠোর সমালোচক।
২০১২ সালে স্বপ্নের ক্লাব এসি মিলানে যোগ দিয়েও আনন্দ উপভোগ করার সুযোগ পাননি। হঠাৎ করেই পিতার মৃত্যু তার ভিতরের সব আলো নিভিয়ে দেয়। ভেঙে পড়েন আকেরবি । বিষণ্নতা তাকে গ্রাস করে, মদ হয়ে ওঠে নিত্যসঙ্গী।
এক সময় মদ্যপ অবস্থায় অনুশীলনে যেতেন, কারো কথা শুনতেন না, নিজের প্রতিও যত্ন ছিল না। ফুটবল তার কাছে তখন অর্থহীন এক রুটিন। এসি মিলান তাকে ছেড়ে দিয়ে চিয়েভোতে পাঠায়, এরপর সাসুউলো।

তারপর এল আরেক দুঃস্বপ্ন। মরণঘাতী ক্যান্সারে আক্রান্ত হন তিনি। দুইবার টেস্টিকুলার ক্যান্সার ধরা পড়ে। তখন অনেকে ভেবেছিলেন, হয়তো এখানেই শেষ। কিন্তু আকেরবি হাল ছেড়ে দিতে শেখেননি।
তিনি চিকিৎসা নিলেন, থেরাপিতে গেলেন, নেশা ছাড়লেন, নিজের শরীর ও মনকে ভালোবাসতে শিখলেন। প্রতিদিন একটু একটু করে বদলাতে শুরু করলেন নিজেকে। মাঠে ফিরে এলেন, আরো পরিপক্ব, আরো নিঃশব্দে শক্তিশালী এক মানুষ হিসেবে।
৩৭ বছর বয়সে এসে যখন ফুটবলারদের বলা হয় বুড়ো আর সেই মানুষটাই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে তরুণ ও ক্ষিপ্র বার্সেলোনার বিপক্ষে গোল করে ইন্টারকে যেন জীবন ফিরিয়ে দিলেন।

শুধু একটি গোল নয়। এটি যেন ছিল একটি আত্মার আর্তনাদ, একটি জীবনের জয়গান। সতীর্থরা যখন বলেন, আকেরবি কখনো হাল ছাড়ে না, তখন তারা শুধু একজন ডিফেন্ডারের কথা বলছেন না। তারা বলছেন এক সাহসিক যোদ্ধার কথা, যে কষ্টের মুখে মাথা নত করেনি।
এখন, প্রতিটি ম্যাচের আগে আকেরবি আকাশের দিকে তাকিয়ে হাত তোলেন তার বাবার উদ্দেশে। সেই সিংহের সাহস নিয়ে তিনি খেলেন, যুদ্ধ করেন,আর ইতোমধ্যেই ইউরোপীয় ফুটবলের মঞ্চে নিজের নাম অমর করে ফেলেছেন।
এই ডিফেন্ডারের জীবন যেন এক মহাকাব্য। তার শরীরে আঁকা সিংহ যেন প্রমাণ করে, তিনি শুধু খেলোয়াড় নন, একজন যোদ্ধা, যিনি ক্যান্সারকে জয় করেছেন নেশা ও মানসিক অবসাদের বিরুদ্ধে লড়েছেন। পিঠে থাকা দুটি ডানা দেখায় তিনি জীবনের তলানি থেকে ফিনিক্স পাখির মতো উড়ে এসেছেন সেরা মঞ্চে।