নটিংহ্যামের মেরি আর্পস নিজের প্রথম ফুটবল ম্যাচে একটি পেনাল্টি ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন। সেই ম্যাচ মাঠে বসেই দেখেছিলেন তার বাবা। মেয়ের এমন সাহস দেখে বাবা বলেছিলেনৱ, সে একদিন বিখ্যাত গোলকিপার হবে। যার কাজ থাকবে প্রতিপক্ষ ফরোয়ার্ডের বুলেট গতির শট রুখে দেয়া। বাবার কথায় সেদিন থেকেই গোলকিপার হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন মেয়েদের ফুটবলে সুপার ব্র্যান্ড খ্যাত মেরি আর্পস।
ফুটবলে মেরি আর্পসকে বলা হয় 'দ্য কুইন অফ স্টপস'। একবার তো তাকে নিয়ে বলতে গিয়ে ইংল্যান্ড জাতীয় দলের সতীর্থ ফুটবলার এলেন হোয়াইট বলেন, মেরি গোলকিপিংটাই বদলে দিয়েছে। তবে নিজে যেমন ছিল ঠিক তেমনটাই আছে।
মেয়েদের ফুটবলে গোলকিপার হিসেবে সবচেয়ে বেশি বেতন পাওয়া ফুটবলার মেরিই। তবে এই সফলতা একদিনে আসেনি। তাকে করতে হয়েছে জীবনের সাথে যুদ্ধ।
২০১১ সালে ১৭ বছর বয়সে ডনকাস্টার বেলসের হয়ে সিনিয়র দলে অভিষেক হয় তার। নন প্রফেশনাল উমেন সুপার লিগে সেসময় এক ম্যাচের জন্য আর্পস পেতেন মোটে ২৫ ইউরো।
নিজের ফুটবল খেলা ও পরিবারের দায়িত্ব নিতে আর্পস করতেন কঠোর পরিশ্রম। টয়শপ থেকে সিনেমা হল-একসাথে ৬টি খণ্ডকালীন কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে হয় তাকে।
আরও পড়ুন:
গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে মেরি আর্পস কি করবেন তা নিয়েও ছিলেন সন্দিহান। একসময় নিয়মিত চাকরিতে ঢুকতে চাইলেও শেষমেষ ফুটবলটাকেই বেছে নেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।
২০২০ সালে বড় ধাক্কা আসে মেরি আর্পসের জীবনে। হঠাৎ করেই জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েন তিনি। তবে ২০২১ সালে নতুন কোচ সারিনা উইগম্যান এসে তার উপর আস্থা রাখেন।
২০২৩ বিশ্বকাপের আগে নাইকির বিপক্ষে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন মেরি আর্পস। বিশ্বকাপে সবার জার্সি বাজারে আনলেও গোলরক্ষকের জার্সি আনতে অপারগতা জানায় কোম্পানিটি। তবে আর্পসের প্রতিবাদে লাখো মানুষ তার পক্ষে পিটিশনে সই করে এবং শেষমেষ নাইকি বাজারে তার জার্সি আনতে বাধ্য হয়।
২০২২ সালে ইংল্যান্ডকে ইউরো জেতাতে ভূমিকা রাখেন মেরি আর্পস। এরপর দুর্দান্ত নৈপুণ্যের স্বীকৃতি হিসেবে টানা দুবার ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলার হন তিনি। ২০২৩ বিবিসি পার্সোনালিটি অব দ্য ইয়ার নির্বাচিত হন মেরি আর্পস। গত মে মাসে জাতীয় দল থেকে অবসর নিয়েছেন মেরি আর্পস।
ভক্তরা অবশ্য এমন সিদ্ধান্তে খুশি না থাকারই কথা। কারণ তার এখনও দেশকে দেয়ার ছিল অনেককিছু। তবে দেশের জার্সি তুলে রাখলেও পিএসজির হয়ে তাকে মাঠে দেখা যাবে ঠিকই।
মেরি আর্পস স্বপ্ন দেখেছেন, ভেঙে পরে বারবার উঠে দাঁড়িয়েছেন। শেষ পর্যন্ত নিজের বিশ্বাস নিয়ে বিশ্বকে জয় করেছেন। মেরি আর্পস একজন গোলকিপার নন তিনি সাহস, আত্মবিশ্বাস ও পরিবর্তনের প্রতীক।