অনূর্ধ্ব-২০ নারী দলের ‘গোলমেশিন’ তৃষ্ণা রানীর সাফল্যের পেছনে দারিদ্র্যের লড়াই

সাফ জয়ী তৃষ্ণা রানী
ফুটবল
এখন মাঠে
0

দেশ কিংবা বিদেশের মাঠে দুর্দান্ত পারফর্ম করে অনূর্ধ্ব-২০ নারী দলের তৃষ্ণা রানী এখন বেশ আলোচিত। তবে তৃষ্ণার উঠে আসার পথটি সহজ ছিলো না মোটেই। চরম দরিদ্রতা আর নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে বড় হয়েছেন গোলমেশিনখ্যাত এ ফুটবলার। অন্যের ভিটেমাটিতে কোনমতে মাথাগুজে থাকেন তৃষ্ণারা দুটি পরিবার।

‘পর পর দুই বেটি হওয়ার পর ওর বাপ মোক আও করে না। কাপড় চোপড় আনি দেয় না। খুব কষ্ট করি তৃষ্ণাক মানুষ কইছু পর। ভাত কাপড় ঠিকমতো দিবা পারু নাই। স্কুল গেইছে জুতা কিনে দিবা পারু নাই। ব্যাগ কিনে দিবা পারু নাই। তাহো আইজ মোর এই ছোয়া বাপের নাম কইল্লে। এলাকার নাম কইল্লে’

এভাবেই সাফ জয়ী তৃষ্ণা রানীর উঠে আসার গল্প শোনাচ্ছিলেন মা সুনীলা রানী। যে মেয়ের জন্মের পর খুশি হতে পারেনি বাবা। আজ সেই মেয়েই বাবা-মা সহ দেশের মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে যাচ্ছে নিয়মিত।

নারী ফুটবলে এখন বেশ পরিচিত এক নাম তৃষ্ণা রাণী। প্রতিপক্ষের রক্ষণ ভেদ করে জালে একের পর এক গোল করে তৃষ্ণা যেন ছাড়িয়ে যাচ্ছেন নিজেকেই। ঘরের মাঠ থেকে পরের মাঠ, দক্ষিণ এশিয়া ছাড়িয়ে এশিয়ার বিভিন্ন বয়সভিত্তিক আসরে গোলের ফোয়ারা ছুটিয়ে এরইমধ্যে গোলমেশিন খেতাব অর্জন করেছেন পঞ্চগড়ের কন্যা তৃষ্ণা রানী। যদিও তার ওঠে আসার পথটা অতটা মসৃণ ছিল না।

আরও পড়ুন:

দিনমজুর বাবা-মায়ের সন্তান তৃষ্ণা। অন্যের পৌনে দুই শতক জমিতে ভাঙা ঘরে কোনমতে মাথাগোঁজার সুযোগ হয়েছে। প্রশাসনের করে দেয়া আধাপাকা ঘরে সাজানো তৃষ্ণার বিভিন্ন অর্জন। সন্তানের কীর্তিগাঁথা ম্লান হয়ে যায় দিনমজুর বাবার কষ্টের কাছে।

তৃষ্ণার বাবা বলেন, ‘আমরা মানুষের বাসায় কাজ করি। খুবই কষ্ট করে বাচ্চাদের মানুষ করেছি।’

ছোট বেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি তৃষ্ণার আগ্রহ দেখে তাকে প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা করেন বোদা উপজেলা ফুটবল অ্যাকাডেমির পরিচালক মোফাজ্জল হোসেন বিপুল। মানুষের কটু কথা আর নানা প্রতিবন্ধকতাকে পাশ কাটিয়ে একাগ্র অনুশীলনে বয়সভিত্তিক জাতীয় দলে জায়গা করে নেন তৃষ্ণা।

তৃষ্ণা রানী বলেন, ‘আমি যেহেতু প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামের মেয়ে, গ্রাম থেকে উঠে আশা অনেক কষ্টকর ছিলো। বিদেশের মাটিতে যখন আমি হ্যাট্রিক করি তখন খুব ভালো লেগেছিলো। আমার টিমমেট, কোচ সবাই খুব খুশি।’

বোদা উপজেলা ফুটবল অ্যাকাডেমি পরিচালক মোফাজ্জল হোসেন বিপুল বলেন, এ ছোট জেলা থেকে নয়জন মেয়ে জাতীয় দলে খেলছে। সকলের পরিশ্রমে আমরা আজ এ পর্যায়ে আসতে পেরেছি।’

তৃষ্ণাকে খাস জমি বন্দোবস্ত দেয়াসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস জেলা প্রশাসনের।

পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক সাবেত আলী বলেন, জাতীয় পর্যায়ে বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যারা ভালো করছে আমরা সবসময় তাদের পাশে আছি। আমরা উৎসাহিত করছি যেন তারা আরও ভালো করতে পারে।’

শুধু তৃষ্ণা নয় এখন দেশের নারী ফুটবলে বেশ দাপটের সঙ্গে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করে চলেছেন পঞ্চগড়ের একঝাঁক তরুণ নারী খেলোয়াড়।


এফএস