যতদূর চোখ যায় ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার কাঁচা হলদে আভায় বিস্তৃত আনারসের বাগান। সকালের সূর্য উঁকি দিচ্ছে পাতার আড়ালে। আর কাঁচাপাকা আনারসের ঘ্রাণে যেন মাতাল চারপাশ।
জমি থেকে পাকা আনারস তুলে থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয় সড়কের পাশে। আর সেখান থেকেই ট্রাকে তুলে আনারস নিয়ে যাওয়া হয় বিভিন্ন এলাকায়।
আনার ব্যবসায়ীরা জানান, তাদের আনারসের ফলন ভালো হয়েছে। তবে পরিবহণের সময় ভাঙা সড়কের জন্য তাদের ভোগান্তির সৃষ্টি হচ্ছে।
সন্তোষপুর বনাঞ্চলের এ পথ ধরে ঘোড়াগাড়ি করে রোজ এমন গাড়িয়ালের দেখা মেলে। আনারসের চারা রোপণ থেকে শুরু করে বাজারজাত পর্যন্ত অনেকের জীবিকা নির্বাহ হয় এভাবেই। এছাড়া আনারসের পাতা সংগ্রহ করেও আয়ের পথ হয়েছে একদল নারী শ্রমিকের।
নারী শ্রমিকরা জানান, আনারসের পাতাগুলো তারা বিক্রি করছেন কোম্পানিগুলোর কাছে। এতে তাদের আয়ের একটি ভালো উৎস তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুন:
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাইকেলে করে আনারস নিয়ে হাটে যাবার তাড়া কৃষকের। টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর, ঘাটাইল এবং ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলা সীমান্তবর্তী গারোর বাজারে মৌসুমে প্রতিদিনই বসে বিশাল হাট। যেখানে প্রতিদিন বিক্রি হয় প্রায় কোটি টাকার আনারস। মৌসুমে যা ছাড়ায় দুই থেকে আড়াইশো কোটি টাকা।
আনারস চাষি এবং ব্যবসায়ী গারোর বাজার মো. লোকমান হোসেন বলেন, ‘মধুপুর, ঘাটাইল, ফুলবাড়িয়া মোট তিনটি উপজেলা থেকে তিনশো থেকে চারশো কোটি টাকার আনারস বিক্রি হয়। সারা বিশ্বে আমাদের আনারস পৌঁছে দেয়ার জন্য আমরা কাজ করছি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এবারে ফুলবাড়িয়ায় আনারসের আবাদ হয়েছে ৬৫০ হেক্টর জমিতে। যেখান থেকে বাণিজ্য হবে অন্তত একশো কোটি টাকার। এছাড়া বিদেশে আনারস রপ্তানি করতে দুবাইয়ে আনারসের নমুনা পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তারা।
ফুলবাড়িয়া- ময়মনসিংহ কৃষি অফিস উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘ফুলবাড়িয়া উপজেলায় প্রতিবছর প্রায় শতকোটি টাকার আনারসের বাজার বসে। এটি ফুলবাড়িয়ার জন্য বড় একটি অর্জন। আনারসগুলো রপ্তানি করতে পারলে আমাদের বৈদেশিকমুদ্রা অর্জনের একটি পথ খুলে যাবে।’
প্রথমে জায়ান্টকিউই জাতের আনারসের আবাদ দিয়ে শুরু হলেও গত বেশ কয়েক বছর ধরে হানিকুইন নামে ছোট জাতের আনারসের চাষ শুরু হয়েছে ফুলবাড়িয়ায়।