ভোলার ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল, ২০২২ সালে উদ্বোধনের পর তিন বছর পার হলেও ব্যবহার না হওয়ায় বিকল হয়ে গেছে অনেক যন্ত্রপাতি। বাধ্য হয়েই রোগীদের অধিক মূল্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হচ্ছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে।
শুধু আইসিইউ নয়, সংকট রয়েছে হাসপাতালের অন্যান্য বিভাগেও। চিকিৎসক, নার্স ও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট সংকটে ব্যাহত হচ্ছে জেলার ২০ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা।
হাসপাতালের অন্তর্বিভাগ ও বহির্বিভাগে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত সেবা। চিকিৎসা নিতে এসে অনেককেই পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে বেসরকারি ক্লিনিক, বরিশাল বা ঢাকার হাসপাতালে। ভুক্তভোগী মাহবুব আলম শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হলেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে তাকে রেফার করা হয়েছে ঢাকায়।
মাহাবুব আলম বলেন, ‘প্রাথমিক যে চিকিৎসা ব্যবস্থাগুলো থাকা দরকার যেমন-আইসিইউ, কার্ডিওলজি সামগ্রী এগুলোর সংকট রয়েছে।’
হাসপাতালে ৬১ জন চিকিৎসকের পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ২১ জন। ৪০টি পদই শূন্য। নার্সের ৯৩টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ৫৭ জন। দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে রেডিওলজিস্ট, মেডিকেল অফিসার, ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসারসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো।
একজন বলেন, ‘যারা একটু অল্প অসুস্থ তাদেরকে রিলিজ দিয়ে দেয়া হয় আর যারা একটু বেশি অসুস্থ তাদেরকে ঢাকা, বরিশালসহ অন্যত্র রেফার করা হয়।’
চিকিৎসাসেবা না দিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ডাক্তারদের অপেশাদার আচরণে দুর্ভোগ আরও বাড়ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। আর জনবল সংকটের কথা বলছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এক রোগীর সাথে থাকা একজন বলেন, ‘ব্রেন টিউমার রোগীকে এখানে এনেছি, তারা চিকিৎসা করেনি, বলেছে ঢাকায় নিয়ে যেতে।’
আরেকজন বলেন, ‘অধিকাংশ টেস্টই করতে দেয় বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে, তাহলে ভোলার সদর হাসপাতাল কেন আছে?’
ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শেখ সুফিয়ান রুস্তম বলেন, ‘এখানে জরুরি বিভাগের কোন ডাক্তার নেই, মেডিকেল অফিসার সব মিলিয়ে আমাদের ৫ থেকে ৭ জন ডাক্তার আছে। বহির্বিভাগ এবং জরুরি বিভাগ মিলিয়ে এত অল্প সংখ্যক ডাক্তার দিয়ে এত বড় চাপ সামাল দেয়া আসলে কঠিন।’
শূন্য পদ পূরণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন।
ভোলার সিভিল সার্জন ডা. মু. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘ভোলা যেহেতু একটা দ্বীপ এলাকা, এখানে বেশিরভাগ ডাক্তার এসে থাকতে চান না। তবে আমরা তাদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিয়ে রাখার চেষ্টা করছি। আবার বিসিএস নিয়োগ হলে আমরা শূন্য কোটাগুলো পূরণ করতে পারবো।’
দেশের একমাত্র দ্বীপ জেলা ভোলার সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নে দ্রুত এই হাসপাতালটিতে চিকিৎসক নার্স ও দক্ষ জনবল নিয়োগ দাবি ভোলাবাসির।