দেশের অন্যতম বৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোন। যমুনা সেতুর পশ্চিম পাড়ে এক হাজার ৪২ একর জমিতে ব্যক্তি মালিকানাধীন নয় প্রতিষ্ঠান ও দুজন ব্যবসায়ীর যৌথ উদ্যোগে গড়ে উঠছে এই অর্থনৈতিক অঞ্চল।
কারখানার জন্য বরাদ্দকৃত ৬০ শতাংশ জমিতে থাকছে ৪০০টি প্লট, যেখানে গড়ে উঠবে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শিল্প কারখানা। শিল্প প্রতিষ্ঠান ছাড়াও আধুনিক সুযোগ-সুবিধার মধ্যে থাকছে খেলার মাঠ, বিনোদন কেন্দ্র,পুলিশ ফাঁড়ি, হাসপাতাল, কারিগরি ইনস্টিটিউট, বর্জ্য পরিশোধনাগার ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা।
ইতোমধ্যে ১৪টি প্রতিষ্ঠান বরাদ্দ নিয়েছে। জাপান ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের প্রকৌশলগত সহায়তায় প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৬৫ শতাংশ এগিয়ে এসেছে। এখনই প্লট বরাদ্দ নিয়ে শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে পারবেন শিল্প উদ্যোক্তারা। সড়ক, রেল ও নৌ যোগাযোগ সুবিধার কারণে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহও বাড়ছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চলের পরিচালক শেখ মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে ২০২৬ এর মাঝামাঝি প্রত্যেকেই ইন্ডাস্ট্রি চালু করতে পারবে এবং সব ধরনের লজিস্টিকস আমরা দিয়ে দিতে পারবো। ইতোমধ্যেই বিদ্যুৎ, পানি, ড্রেনেজ সিস্টেম, অভ্যন্তরীণ রাস্তাঘাটগুলো প্রস্তুত রয়েছে।’
সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোনের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা লে. কর্নেল মো: শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোন উত্তরবঙ্গের প্রবেশপথে অবস্থিত যার ফলে এখানকার বিনিয়োগ সুবিধা অনেক বেশি এবং অনেক বিদেশি কোম্পানি আমাদের সাথে যোগাযোগ করছে।’
অর্থনৈতিক অঞ্চলটি পুরোপুরি চালু হলে গড়ে উঠবে ছোট-বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান। এতে কর্মসংস্থান হবে কয়েক লাখ মানুষের, যা দারিদ্র বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক পরিচালক মির্জা মোস্তফা জামান বলেন, ‘ইকোনমিক জোন গড়ে উঠলে সিরাজগঞ্জের জন্য ব্যবসায়িক নতুন দ্বার উন্মোচন হবে এবং সেই সাথে পুরো উত্তরাঞ্চল অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে।’
সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি সাইদুর রহমান বাচ্চু বলেন, ‘এই ইকোনমিক জোন চালু হলে এখানে প্রায় ১৫০০০০ শ্রমিকের কাজের সুযোগ তৈরি হবে। ফলে এখানে নতুন বাসস্থান হবে, কর্মসংস্থান হবে, সিরাজগঞ্জের চেহারা পালটে যাবে।’
২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকার এ প্রকল্পকে চূড়ান্ত নিবন্ধন দেয় বেজা। ২০১৯ সালের ৩ এপ্রিল শুরু হয় নির্মাণকাজ। সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোন শুধু শিল্পায়ন নয়, উত্তরাঞ্চলের অর্থনৈতিক গতিশীলতাও বাড়াবে, এমনটাই আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আরিফ হাসান বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন যে অর্থনৈতিক সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোন কর্তৃপক্ষ চাইলে তারাও অর্থের সংস্থানের মাধ্যমে তারা এখানে আন্তর্জাতিক মানের বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরি করতে পারে।’
দ্রুত কাজ শেষ হলে এটি হবে দেশের অন্যতম বৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল।