মানিকগঞ্জে বিদ্যালয় স্থানান্তরের প্রতিবাদে সভা ও মানববন্ধন

মানিকগঞ্জ
এখন জনপদে
0

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার ছনকা উচ্চ বিদ্যালয় ধলেশ্বরী নদীর পূর্ব পাশ থেকে পশ্চিম পাশে স্থানান্তর করার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করেছে এলাকাবাসী। আজ (শনিবার, ২২ মার্চ) বেলা ১১ টার দিকে বিদ্যালয় মাঠে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মানববন্ধনে শিক্ষার্থী, অভিভাবক, স্থানীয় শিক্ষানুরাগী, রাজনীতিবিদ ও এলাকাবাসী মিলিয়ে সহস্রাধিক মানুষ অংশ নেয়।

এ প্রতিবাদ সভার সভাপতিত্ব করেন মুয়াজ্জেম হোসেন তোলা মাষ্টার। সভায় বক্তব্য দেন সাটুরিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কুদ্দুছ খান মজলিশ মাখন, যুগ্ম সম্পাদক আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহিন আজাদ বিপ্লব, স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক মহসিন উজ্জামান, যুবদলের সদস্য সচিব মো. ফরিদ, বরাইদ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ আব্দুল হামিদ, সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান খান স্বিপন, বিদ্যালয়ের জমি দাতা মিজানুর রহমান, আব্দুল মজিদ প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, বরাইদ ইউনিয়নটি ধলেশ্বরী নদী দ্বারা শাসিত, এবং অধিকাংশ অঞ্চল চরাঞ্চল। এ ইউনিয়নে ছনকা গ্রামের আশেপাশে আর কোনো বিদ্যালয় না থাকায় ২০১৫ সালে সর্বস্তরের জনসাধারণের সুবিধার্থে ছনকা উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। এতে ওই এলাকার দরিদ্র শিক্ষার্থীরা শিক্ষা লাভ করতে থাকে। ২০২২ সালে বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়, তবে সম্প্রতি বিদ্যালয়টি স্থানান্তরের জন্য পায়তারা চলছে।

স্থানান্তরের বিরোধিতা করে বক্তারা জানান, বর্তমান স্থানে বিদ্যালয় থাকলে বরাইদ ইউনিয়নের ৫টি ওয়ার্ডের মানুষ শিক্ষা সেবা পাচ্ছে, কিন্তু পশ্চিম পাশে স্থানান্তর করলে তা শুধু একটি ওয়ার্ডের লোকদের আংশিক সুবিধা দেবে। তাদের মতে, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল, নদীর পশ্চিম পাশে বিদ্যালয় স্থানান্তরের জন্য জমি ক্রয় করে নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণের চেষ্টা করছে।

এদিনের প্রতিবাদ সভার পর মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সাটুরিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কুদ্দুছ খান মজলিশ মাখন বলেন, বিদ্যালয় যদি নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে স্থানান্তরের বিধান রয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃবৃন্দ বরাইদ ইউনিয়নের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে বিদ্যালয় স্থানান্তরের চেষ্টা করছেন।

বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ফাহিমা আক্তার বলেন, ‘যেখানে বিদ্যালয়টি স্থানান্তরিত করতে চাচ্ছে, সেখানে একটি বাজার রয়েছে। এতে আমাদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি হবে, কারণ বখাটে যুবকরা আমাদের হয়রানি করতে পারে। তাছাড়া খেয়া পারাপার সময়ও বাড়বে, যার ফলে আমাদের সময়ের অপচয় হবে। আমরা চাই, বিদ্যালয়টি এখানেই থাকুক।’

বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ আব্দুল মজিদ জানান, বিদ্যালয় স্থানান্তরের বিষয়ে ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে মানিকগঞ্জ সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, মামলাটি থাকার পরেও, বিদ্যালয় স্থানান্তরের জন্য কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

এদিকে, সাটুরিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফকির জাকির হোসেনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি। উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মো. আসাউদ জামান জানান, কয়েক বছর আগে বিদ্যালয়ের পক্ষে একটি পক্ষ নদী ভাঙ্গনে ক্ষতির শঙ্কা নিয়ে একটি চিঠি দেয়। ওই সময় বিভিন্ন টিম কমিটির সদস্যরা এই শঙ্কা সত্যতা পেয়েছিলেন। পরে বিদ্যালয় স্থানান্তরের জন্য মন্ত্রণালয় ও ডিজি অফিস থেকে চিঠি আসে। তবে, সম্প্রতি জানা গেছে, ছনকা গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ চাইছে বিদ্যালয়টি বর্তমান স্থানে থাকুক এবং আদালত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারক লিপি প্রদান করা হবে। এরপর, যদি স্থানান্তর কাজ না বন্ধ হয়, তবে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি হাতে নেওয়া হবে বলে বক্তারা জানিয়েছেন।

এএইচ