গেলো বর্ষায় ভারতের পাহাড়ি ঢলে ফুলগাজী-পরশুরামের মুহুরি, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর ১০২টি স্থানে বাঁধ ভেঙে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে ফেনীবাসী। যার ক্ষত এখনো মেটেনি।
বন্যার পর ভেঙে যাওয়া বাঁধগুলো জোড়াতালির মেরামত করা হলেও করা হয়নি স্থায়ী সমাধান। তাই আসছে বর্ষায় আবারও বানে ভাসার শঙ্কা স্থানীয়দের।
স্থানীয়দের একজন বলেন, ‘বাঁধগুলো যদি টেকসই করে ভালোভাবে করা হয় তাহলে আমরা নিরাপদে থাকতে পারবো।’
গেলবার পরশুরামের মির্জানগর ইউনিয়নের নিজ কালিকাপুর সীমান্তের শূন্যরেখায় বল্লামুখার ভারতীয় অংশের বাঁধ কেটে দিয়েছিলো ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী। আর এ কারণে বন্যা ভয়াবহ রূপ নিয়ে ছিল বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। সীমান্ত জটিলতায় সেই বাঁধের এক প্রান্তের কাজ এখনও হয়নি।
একজন স্থানীয় বলেন, ‘যে পয়েন্টে বাঁধ ভেঙেছিল, সেই পয়েন্টের মূল বাঁধটি যদি দুই দেশ বসে যদি টেকসইভাবে করা হয় তাহলে এই ছোট বাঁধগুলোর ওপর এতটা চাপ আসে না। আর এখন যে বাঁধগুলো করা হচ্ছে সেগুলো টেকসই হবে না যদি মূর বাঁধটি ঠিক করে বাঁধা না হয়।’
জেলা প্রশাসনের হিসেবে গেলবারের বন্যায় কৃষি, সড়ক, আবাসন, শিক্ষাসহ সব খাত মিলিয়ে ক্ষতি হয়েছে দুই হাজার ছয়শ ৮৬ কোটি টাকার বেশি। প্রাণ হারিয়েছেন ৩৫ জন। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকানোর আহ্বান সচেতন মহলের।
ফেনীর সুজনের সাধারণত সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘যে জায়গাগুলোতে বাঁধ মেরামত করা হয়, সেই স্থানেই আবার ভেঙে যায়। তাছাড়া প্রতি বছর বাঁধের পাড়ের কাছ থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হয়, বালু লুট করা হয়। এর ফলে সেটা দিন দিন সংকীর্ণ ও দুর্বল হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে।’
এদিকে চলমান বাঁধ মেরামত কাজ বর্ষা আসার আগেই শেষ হবে বলে আশা পনি উন্নয়ন বোর্ডের।
ফেনীর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আখতার হোসেন মজুমদার বলেন, ‘৯৬টি ভাঙন মেরামতের কাজ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে, ছয়টি স্থানের বড় ভাঙন মেরামতের কাজ চলছে। এর মধ্যে একটি আংশিকভাবে নো ম্যানস ল্যান্ডে, সেটার ব্যাপারে সরকারিভাবে আলোচনার মাধ্যমে করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
গেল বন্যায় ফেনীর মুহুরি, কহুয়া, সিলোনিয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের মোট ভাঙন ১০২টি স্থান ভেঙে যায়। যা মেরামতে ২০ কোটি ৬৮ লাখ টাকার কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
সম্প্রতি মুহুরি কহুয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণে চার হাজার ৬৩৫ দশমিক তিন নয় কোটি টাকার খসড়া প্রস্তাবনা তৈরি হয়েছে। জমি অধিগ্রহণসহ এই প্রকল্পের ব্যয় দশ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জোড়াতালির কাজের এই চিত্র ফেনীর ফুলগাজী, পরশুরামের প্রতি বছরের। নদী তীরবর্তী বেড়িবাঁধ মেরামতে প্রতিবছর কোটি টাকা ব্যয় হলেও কাজের কাজ কিছুই হয় না। বর্ষা এলেই ফের ডুবতে হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় বসতি, ফসল ও জনজীবন। মুহুরি, কহুয়া, সিলোনীয়া নদী তীরে একটি টেকসই স্থায়ী বাঁধ লাখো বাসিন্দাকে মুক্তি দিতে পারে এই দশা থেকে।