চিড়িয়াখানার খুপরি ঘরে রাখা দু'টি ভাল্লুকের একটির ক্ষত পায়ে পচন ধরেছে। বেশ কয়েকদিন আগে পায়ে আঘাত পেলেও চিকিৎসা দেয়া হয়নি। ভাল্লুকটির পায়ের অংশবিশেষ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ক্ষতস্থান থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। দুর্গন্ধময় পরিবেশে অস্বস্তিবোধ করতেন দর্শনার্থীরাও।
বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট জানায়, চিড়িয়াখানায় ১৯ প্রজাতির ১১৪টি প্রাণী রয়েছে, এর মধ্যে ১৩ প্রজাতির ৬৫টি বন্যপ্রাণী। যেগুলো বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ দ্বারা রক্ষিত।
যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বন্যপ্রাণীগুলো হলো ভাল্লুক দুইটি, মিঠা পানির কুমির একটি, বার্মিজ অজগর একটি, মেছো বিড়াল দুইটি, বন বিড়াল দুইটি, বক দুইটি, মদনটাক দুইটি, বানর একটি, হনুমান একটি, লজ্জাবতী বানর একটি, টিয়া দুইটি, বালি হাঁস সাতটি।
বন্যপ্রাণী আইন ২০১২ অনুযায়ী, অনুমতি ব্যতীত বন্যপ্রাণী সংগ্রহ, দখলে রাখা, প্রদর্শন ও সংরক্ষণ করা দণ্ডনীয় অপরাধ।
নানা অভিযোগে মঙ্গলবার বিকেলে চিড়িয়াখানাটিতে অভিযান চালায় বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট। মিলেছে অভিযোগের সত্যতাও। চিড়িয়াখানার নামে এখানে পশু-পাখির সাথে অমানবিক আচরণ করা হয়েছে বলে জানান ইউনিটের সদস্যরা।
অভিযানের নেতৃত্ব দেয়া বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কর্মকর্তা রথীন্দ্র কুমার বিশ্বাস বলেন, 'র্যাপিড রেসপন্স বিডিসহ বেশকয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের সহায়তায় পশু-পাখি-প্রাণিগুলো উদ্ধার করা হয়েছে।
উদ্ধারকৃত বন্যপ্রাণীগুলো যথাযথ কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে। কোয়ারেন্টাইন পরবর্তী কিছু বন্যপ্রাণী প্রকৃতিতে অবমুক্ত করা হবে এবং বাকিগুলো সাফারি পার্ক, গাজীপুর হস্তান্তর করা হবে। তবে অসুস্থ ভালুকটিকে এখানে রেখেই দেয়া হবে চিকিৎসা।'
পরিবেশ সংগঠক আবুল কালাম আজাদ বলেন, 'প্রশাসনের নাকের ডগায় অবৈধভাবে পরিচালিত চিড়িয়াখানায় প্রাণীদের সাথে অমানবিক আচরণ করা হয়েছে। জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসন এবং বন বিভাগের অফিসের কাছাকাছি এমন একটি জায়গায় এই অবৈধ চিড়িয়াখানাটি চলেছে দিনের পর দিন। কেউ কোনো টু শব্দ করেন। যারা এই প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।'
এদিকে চিড়িয়াখানার কর্মী মিজানুর রহমান মামুন চিড়িয়াখানার অনুমোদন রয়েছে বলে দাবি করলেও দু'টি চিত্রা হরিণ ক্রয়ে বনবিভাগের অনুমোদন এবং জমির লিজের চুক্তিপত্র ছাড়া আর কোনো তথ্য প্রমাণ দেখাতে পারেননি। তবে চিড়িয়াখানার অনুমোদনের জন্য আবেদন করা আছে বলেও জানান তিনি।
বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের বন্যপ্রাণী পরিদর্শক নার্গিস সুলতানা বলেন, 'অনুমোদন না থাকায় চিড়িয়াখানাটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি এর সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া।'
তবে দীর্ঘ ১২ বছরেও কেন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি, এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তারা।
নার্গিস সুলতানা বলেন, 'তাদের নোটিশ করা হয়েছিল। সিরিয়াল অনুযায়ী এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হয়। এখন এখানে অভিযানের সিরিয়াল এসেছে তাই অভিযানে আসা হয়েছে।'
সিটি করপোরেশনের সচিব সুমনা আল মজিদ বলেন, 'বাৎসরিক ভাড়ার ভিত্তিতে শর্তসাপেক্ষে চিড়িয়াখানার জায়গাটি লিজ দেয়া হয়েছে। চিড়িয়াখানার অনুমোদন দেয়ার বিষয়টি সিটি করপোরেশনের এখতিয়ারে নেই। বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে। শর্ত ভঙ্গ হলে লিজ বাতিল করা হবে।'
২০১৩ সালে নগরীর জয়নুল আবেদীন উদ্যানের ভেতরে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় মিনি চিড়িয়াখানাটি গড়ে তোলা হয়। শ্যালক সেলিম মিয়ার নামে সিটি করপোরেশন থেকে জায়গা লিজ নিয়ে মূলত চিড়িয়াখানাটি পরিচালনা করতেন সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবুর রহমান দুলাল। প্রতি দর্শনার্থীর কাছ থেকে প্রবেশ ফি নেয়া হতো ৩০ টাকা।