ফরিদপুরে পাট উৎপাদনে ব্যয় বৃদ্ধির শঙ্কায় চাষিরা

এখন জনপদে
0

প্রতিবছরই দেশের সোনালি আঁশ খ্যাত পাটের আবাদের উৎপাদন ব্যয় বেড়েই চলেছে। কিন্তু বাজারে এর দর কাঙ্ক্ষিত হারের বাড়ছেনা। পাট চাষাবাদে ব্যয়ের সাথে বিক্রয় মূল্যে ব্যবধান বেড়ে যাওয়ার শঙ্কায় চাষিরা। প্রতি মণ পাটের গত বছরের চাষি পর্যায়ে বিক্রয় মূল্য ছিল প্রকার ভেদে দই হাজার ৫০০ থেকেদই হাজার ৮০০ টাকায়, যার উৎপাদন ব্যয় আর বিক্রয় মূল্য সমান সমান। এই কারণেই পাট চাষিদের চোখে-মুখে হাসি ছিল না।

পাট উৎপাদনে দেশের শীর্ষ অবস্থানের জেলা হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ফরিদপুরে চলতি মৌসুমে পাটের আবাদে সর্বক্ষেত্রে ব্যয় বাড়ছে বলে জানিয়েছেন চাষিরা। তারা মনে করছেন এতে পাটের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ। তাই পাট উৎপাদন খরচের ঊর্ধ্বগতির লাগাম টেনে ধরতে কৃষি বিভাগের সহযোগিতা চায় জেলার পাট চাষিরা।

কৃষি প্রধান জেলা ফরিদপুরের সালথা , নগরকান্দা, বোয়ালামারী, ভাঙ্গা উপজেলার মাঠ থেকে চলতি মৌসুমে পেঁয়াজসহ অন্যান্য ফসল তুলে নেয়ার পরই কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন পাটের বীজ বপনে। এই মৌসুমে জেলা জুড়ে ৮৬ হাজার ৫২৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

কিন্তু শুকনো মৌসুমে বৈরী আবহাওয়ার কারণে পানির দুষ্প্রাপ্যতাসহ পাট চাষাবাদের সাথে সম্পৃক্ত প্রায় সকল ধরনের উপকরণ ও শ্রমিকের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদিত পাটে ন্যায্য মূল্য পাওয়া না পাওয়ার দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়েছেন কৃষকরা।

জেলার পাট উৎপাদনের খ্যাত সালথা, নগরকান্দা, বোয়ালমারী, ভাঙ্গা উপজেলা বিভিন্ন ফসলি মাঠে গিয়ে দেখা মেলে, পাট চাষিরা কেউ পাটের ক্ষেতে সেচ দিয়ে ভেজাচ্ছেন, কেউ বীজ বপন করছেন, কেউ বা ক্ষেত থেকে আগাছা পরিষ্কারের কাজ করছেন। তবে তাদের সকলের চোখে মুখেই হতাশার ছাপ।

এসকল মাঠের পাট চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আবহাওয়ার পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে গত কয়েক বছর ধরে ক্রমশ ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নামছে। শঙ্কট এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে অনেক মেশিনে পানি উঠছে না।

এসব কারণে জমিতে পানি সরবরাহের খরচ বেড়েছে প্রায় তিনগুণ।

একই সাথে সার, ওষুধসহ বিভিন্ন উপকরণের মূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি দৈনন্দিন শ্রমিকের অতিরিক্ত মূল্য ভাবিয়ে তুলছেন কৃষকদের।

বোয়লামারীর দাদুড়ে বিলের পাট চাষিরা জানালেন, ব্যয়ের সাথে আয় মেলাতে না পেরে হাপিয়ে উঠতে হচ্ছে তাদের।

জেলার ঘোষপুর ইউনিয়নের পাট চাষি আশুতোষ মালো, ফারুক জোসেন, মনিরুজ্জামানসহ অনেকেই দাবি করেন, উৎপাদন খরচ বাড়লেও আনুপাতিক হারে বারে না উৎপাদিত পণ্যের মূল্য। আর এতে বরাবরই আর্থিক ক্ষতিতে থাকেন কৃষকরা।

তারা মনে করেন পাট আবাদের সাথে সংশ্লিষ্ট উপকরণ ও অন্যান্য ব্যয় হ্রাসকরণের পাশাপাশি উৎপাদিত পাটের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে সরকারের ভূমিকা থাকা জরুরি।

ফরিদপুর পাটের উৎপাদনের ব্যয় বৃদ্ধির কথা স্বীকার করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালন কৃষিবিদ শাহাদুজ্জামান জানালেন, জলবায়ুর পরিবর্তনে বৈরী আবহাওয়া অনেক ক্ষেত্রে ব্যয় বৃদ্ধি করে, তবে ভালভাবে পরিচর্যার মাধ্যমে উৎপাদন বাড়াতে পারলে ব্যয়ের হার কিছুটা কমানো সম্ভব হবে।

এসএইচ