আজ (শনিবার, ১৯ এপ্রিল) রাঙামাটি মারী স্টেডিয়ামে দিনব্যাপী সাংগ্রাই জলোৎসবের আয়োজন করে মারমা সংস্কৃতি সংস্থা (মাসস)। প্রধান অতিথি হিসেবে দুপুরে পানি ছিটিয়ে জল উৎসবের সূচনা করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। এরপরই মারমা তরুণ-তরুণীরা মেতে ওঠেন সাংগ্রাই জল উৎসবে। পরিবেশিত হয় বাংলাসহ পাহাড়ি জাতিসত্তাগুলোর ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির নৃত্যসঙ্গীত।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, 'আমরা একসাথে আছি। একসাথে রাখতে চাই। একসাথে হাঁটতে চাই। এটাই আমাদের স্বপ্ন। নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন। এটাই আমাদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের স্বপ্ন যে একসাথে হাঁটবো, একসাথে কাজ করবো, কোন ভেদাভেদ থাকবে না। সবার অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করবো। এটাই হচ্ছে আমাদের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার স্বপ্ন।'
তিনি বলেন, 'আপনারা সবাই সহযোগিতা করুন। ভবিষ্যতে এই এলাকায় অর্থনীতি, শিক্ষা, পরিবেশ সহ সব ক্ষেত্রে আমরা হারমোনিয়াস ডেভেলপমেন্ট দেখতে চাই। এখানে আমরা সবাই একসাথে হাতে হাত ধরেই এই প্রচেষ্টাটা চালিয়ে দেখি। আপনারা কখনও ভাববেন না যে পাহাড়ের ওপরে আছেন বলেই সমতলের বিচ্ছিন্ন কেউ নন আপনারা।'
মারমা তরুণ তরুণীরা দল বেঁধে উৎসব করে একে অপরের গায়ে জল ছিটিয়ে ভিজিয়ে দেয়। তাদের বিশ্বাস, এ জল ছিটিয়ে দেয়ার মধ্যে দিয়ে পুরানো বছরের দুঃখ, গ্লানি, হতাশা, অমঙ্গল মুছে গিয়ে নতুন বছরে সুখ শান্তি কল্যাণ বয়ে আনে। নববর্ষকে বরণ ও পুরোনো বছরকে বিদায় জানাতে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত মারমা সম্প্রায় চৈত্রসংক্রান্তিতে সাংগ্রাই জল উৎসব উদযাপন করে থাকে।
পাহাড়ের সবচেয়ে বড় সামাজিক উৎসব বৈসাবি নানান আয়োজনে পালন করে পাহাড়ের মানুষ। তাই অনুষ্ঠানে মানুষের আগ্রহ ছিল বেশি। অনুষ্ঠানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার সহ বিভিন্ন দূতাবাসের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া জল উৎসবে যোগ দিতে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষের আগমন ঘটে।
ফলে এ উৎসব পরিণত হয়েছে সম্প্রীতির মিলন মেলায়। উৎসবে মারমা সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীদের ঐতিহ্যবাহী জলকেলি ছাড়াও পরিবেশিত হয় আবহমান বাংলার নৃত্য-সঙ্গীতসহ বৈচিত্র্যপূর্ণ পাহাড়ি জাতিসত্তাগুলোর নান্দনিক সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এতে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মাতে পাহাড়ি বাঙালি জনগোষ্ঠীর মানুষ।
ফলে বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি এ উৎসব পরিণত হয়েছে সম্প্রীতির মিলন মেলায়। উৎসবে মারমা সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীদের ঐতিহ্যবাহী জলকেলি ছাড়াও পরিবেশিত হয় আবহমান বাংলার নৃত্য-সঙ্গীতসহ বৈচিত্র্যপূর্ণ পাহাড়ি জাতিসত্তাগুলোর নান্দনিক সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এতে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মাতে পাহাড়ি বাঙালি জনগোষ্ঠীর মানুষেরাও।
উৎসব কমিটির সদস্য সচিব ও মারমা সংস্কৃতি সংস্থা (মাসস) এর সাধারণ সম্পাদক উশিনু মারমা নয়ন বলেন, 'পানি খেলার মাধ্যমে আমরা বার্তা দিতে চাই -আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামে যে সম্প্রীতি আছে, সেখানে পাহাড়ি বাঙালিসহ ১৩টি জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সৌহার্দপূর্ণ সম্প্রীতি অটুট থাকুক। এর মধ্যদিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি এবং সম্প্রীতির ধারা সূচিত হবে।'
অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব প্রদীপ কুমার মহোত্তম, যুগ্মসচিব কঙ্কন চাকমা, রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজল তালুকদার, জেকা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ, পুলিশ সুপার ড. এসএম ফরহাদ হোসেন, জেলা বিএনপির সভাপতি দীপন তালুকদার দিপু ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ মামুন অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।