পাঁচ শিক্ষার্থীর অপহরণে পার্বত্য চট্টগ্রাম উপদেষ্টার উদ্বেগ, পাঁচ দিনেও মেলেনি খোঁজ

অপহৃত হওয়া পাঁচ শিক্ষার্থী
এখন জনপদে
0

খাগড়াছড়ি থেকে অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থীর খোঁজ পাঁচ দিনেও মেলেনি। অপহৃতদের ভাগ্যে কী ঘটেছে তাও নিশ্চিত করতে পারছে না কেউ। এতে চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন তাদের স্বজনরা। তবে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে চালানো হচ্ছে উদ্ধার তৎপরতা। অপহরণকাণ্ডের জন্য পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠন প্রসীত খীসার ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টকে (ইউপিডিএফ) দায়ী করা হলে অস্বীকার করেছে সংগঠনটি। সবশেষ উদ্বেগ জানিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা অপহরণকারীদের অনুরোধ করেছেন, অবিলম্বে নিঃশর্তে শিক্ষার্থীদের সুস্থ শরীরে মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দেয়ার।

আজ (রোববার, ২০ এপ্রিল) দুপুরে রাঙামাটি সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের কাছে দেয়া বক্তব্যে এ আহ্বান জানান পার্বত্য চট্টগ্রাম উপদেষ্টা।

গেল ১৬ এপ্রিল খাগড়াছড়ির কুকিছড়া থেকে জেলা সদরে যাওয়ার পথে গিরিফুল নামক এলাকায় অটোরিকশা আটকে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা চালকসহ পাঁচ শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে। পরে চালককে ছেড়ে দিলেও পাঁচ শিক্ষার্থীর খোঁজ এখনও মেলেনি। এ ঘটনায় পাহাড়ে জনমনে উদ্বেগ বেড়েছে। তবে এ ঘটনায় এখনও সাধারণ ডায়েরি বা কোনো মামলা হয়নি।

উদ্বেগ প্রকাশ করে খোদ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা জানিয়েছেন, ঘটনার পর থেকে সার্বক্ষণিক অপহৃত শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে খোঁজ রাখছেন তিনি। এ ব্যাপারে সব সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন।

তাদের দ্রুত উদ্ধারে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নিরাপত্তা বাহিনীর উদ্ধার তৎপরতা চলছে। যতদ্রুত সম্ভব সম্পূর্ণ সুস্থভাবে উদ্ধার করে তাদের মা, বাবার কাছে ফিরিয়ে দিতে আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানান উপদেষ্টা। অবিলম্বে নিঃশর্তে শিক্ষার্থীদের সুস্থ শরীরে ফিরিয়ে দিতে অপহরণকারীদের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

পার্বত্য উপদেষ্টা আরও বলেন, 'পাহাড়ে এ ধরনের অপহরণ ঘটনা কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়। তাছাড়া উৎসব চলাকালে এ ধরনের কর্মকাণ্ড জঘন্য অপরাধ, যা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে কোনোরকম ছাড় নেই। পাহাড়ে এ ধরনের অপতৎপরতার মূলে বড় ফ্যাক্টর চাঁদাবাজি। যেকোনো উপায়ে পাহাড়ে অপহরণ ও চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। অপরাধী কাউকে ছাড় দেয়া যাবে না। এ লক্ষ্যে সবাইকে একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে।'

অপহৃতরা হলেন- পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সমর্থনপুষ্ট পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখার সদস্য রিশন চাকমা এবং তার চার সহপাঠী বিশ্ববিদ্যালয়টির চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী মৈত্রীময় চাকমা, নাট্যকলা বিভাগের দিব্যি চাকমা, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের লংঙি ম্রো ও চারুকলা বিভাগের অলড্রিন ত্রিপুরা। তারা সবাই চবির ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে।

উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে অপহৃত দিব্যি চাকমার মা রাঙামাটির বরকলের ভারতী দেওয়ান জানান, তারা খুবই উদ্বিগ্ন। তাদের সন্তানরা কোথায়, কী অবস্থায় রয়েছে- তা কিছুই জানতে পারছেন না। তারা যাতে ভালো থাকে, সুস্থ থাকে এবং দ্রুত সম্পূর্ণ সুস্থভাবে ফিরতে পারে সেজন্য সবার আশীর্বাদ কামনা করেছেন তিনি।

অপহরণের শুরু থেকেই এ ঘটনায় প্রসীত খীসার ইউপিডিএফের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপিডিএফের সংগঠক অংগ্য মারমা বলেছেন, 'এ ধরনের অপহরণের ঘটনায় আমাদের সংগঠনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমরা কোনো রকম সহিংস রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই। তাই আমরা শুরু থেকে ভাতৃঘাতী সংঘাতের বিপক্ষে।'

এদিকে অপহৃতদের দ্রুত উদ্ধারের দাবিতে রোববার সকালে রাঙামাটিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অধ্যয়নরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা। পরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপিও পাঠিয়েছেন তারা। এ সময় ঘটনার সঙ্গে ইউপিডিএফ জড়িত বলে অভিযোগ করা হয়।

খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, 'অপহৃতদের উদ্ধারে জোরালো তৎপরতা চলছে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের অবস্থান শনাক্ত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এ ঘটনায় এখনো সাধারণ ডায়েরি বা কোনো মামলা হয়নি।'

এসএস