শুধু তাই নয়, সমালোচনা এড়াতে কাজের স্থানে প্রকল্পের সাইনবোর্ডে সবকিছু উল্লেখ থাকলেও কাজের মূল্য লেখেননি ঠিকাদার। তবে একটি চার তলা সরকারি ভবন নির্মাণে এত টাকা ব্যয় ধরায় ইতোমধ্যে তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা শুরু হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতাধীন প্রকল্পটির নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে জয়েন্ট ভেঞ্চারে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স এমভি ও ইসি।
এ ছাড়াও কাজটির তদারকির দায়িত্বে যারা রয়েছেন, তারা কেউ সরেজমিনে আসছেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। নিজেদের লোক দিয়ে ঢাকায় বসে কাজ তদারকি করছেন বলে জানান নির্মাণশ্রমিকরা। হর্টিকালচারের ভেতরে কারো নজরে না আসায় অনেকটা লুকিয়ে তড়িঘড়ি করে কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ অনেকের।
সরেজমিন দেখা গেছে, ইতোমধ্যে একতলার পিলার নির্মাণ শেষ হয়েছে। ফ্লোরে মাটি ভরাটের কাজ চলছে। তবে বালি দিয়ে ভরাটের কথা থাকলেও পাহাড়ের মাটি দিয়ে চলছে ফ্লোর ভরাটের কাজ।
এ ছাড়াও পিলারে ৬ সুতা ১৫ এমএম রড ধরা থাকলেও কোনো কোনো পিলারে ৫ সুতা বা ৪ সুতা রড দিতে দেখা গেছে। ভবনটি নির্মাণে ৪১ দিন লোড টেস্ট করার কথা থাকলেও নিয়ম মেনে তা করা হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে।
শুধু তাই নয়, ঢালাইয়ের কাজেও নিম্নমানের ইট-বালি খোয়া ব্যবহার করা হয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রকৌশল বিভাগ না থাকায় একটি কনস্ট্রাকশন ফার্মের অধীনে কাজটি সম্পাদন করছেন ঠিকাদার মোজাফফর।
অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্প পরিচালক ও কর্মকর্তারা ঢাকায় থাকায় নিয়মিত কাজের জায়গায় আসেন না। তাই কনস্ট্রাকশন ফার্মের লোকদের ম্যানেজ করে ইচ্ছেমত কাজ সম্পাদন করছেন ঠিকাদার।
এ ছাড়াও প্রকল্পের কর্তাদের আসা-যাওয়া থাকা-খাওয়াসহ সব কিছু ব্যবস্থা করেন ঠিকাদার এবং যাওয়ার সময় তাদের মোটা অংকের টাকা দেন। তাই কাজ যেভাবেই হোক না কেন, সেটা নিয়ে মাথা ঘামান না কেউ। অফিস ঠিক থাকলে সব ঠিক। কনস্ট্রাকশন ফার্মকে ঠিকাদার যেভাবে বলেন, তারা সেভাবেই কাজের অনুমোদন দেন।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ঠিকাদার বলেন, চার তলা একটি ভবন যত অত্যাধুনিক-ই হোক না কেন, সাত থেকে আট কোটি টাকার বেশি ব্যয় হওয়ার কথা না। আমরা বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের বহুতল ভবন নির্মাণ করেছি, যার ব্যয় ধরা হয় চার থেকে পাঁচ কোটি টাকা। কিন্তু এখানে হর্টিকালচারের চার তলা ভবন নির্মাণে সাড়ে ১৬ কোটি টাকা ব্যয় এটা অতিরিক্ত। প্রকল্প পরিচালকরা অর্থ লুটপাট করার জন্য এমন আজগুবি ব্যয় ধরেছে। এটি নির্মাণে এত টাকা ব্যয় হওয়ার প্রশ্নই আসে না। ঠিকাদার আর প্রকল্প পরিচালক মিলে সব ভাগ-বাটোয়ারা করবে। দুদকের মাধ্যমে অনুসন্ধান করলে সত্যিটা বের হয়ে আসবে।
এদিকে কাজের বিষয়ে ঠিকাদার মোজাফফর বলেন, ‘নিয়ম মেনে সব কাজ করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের মানুষ সার্বক্ষণিক কাজের সাইডে থাকেন।’
প্রকল্পের সাইনবোর্ডে ব্যয় উল্লেখ না করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেক পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠন চাঁদা দাবি করেন। তাই তাদের কাছ থেকে লুকানোর জন্য সাইনবোর্ডে উল্লেখ করা হয়নি। কাজের মূল্য ১৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।’
প্রকল্প পরিচালক তালহা যোবায়ের বলেন, ‘সাইনবোর্ডে কাজের মূল্য উল্লেখ করা হয়নি কেন সেটি ঠিকাদারকে জিজ্ঞেস করা হবে এবং মূল্য উল্লেখ করার কথা বলা হয়েছে। কাজে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। আমরা কনস্ট্রাকশন ফার্ম নিয়োগ করেছি, তারা তদারকি করছে। আগামী সপ্তাহে কাজ দেখতে যাবো।’
চারতলা ভবনটির ব্যয় এত ধরা হয়েছে কেন এমন প্রশ্নের জবাবে পিডি বলেন, ‘এটি একটি অত্যাধুনিক ডিজাইনের বিল্ডিং। এটি নির্মাণ হলে বুঝা যাবে কেন এত টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।’
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ ডিসেম্বর প্রকল্পটির নির্মাণের কার্যাদেশ দেয়া হয়। ২০২৬ সালের জুন মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।