বিলুপ্তপ্রায় নাজিরশাইল ফিরছে উচ্চ ফলনশীল হয়ে

ময়মনসিংহ
নাজিরশাইল ফিরছে উচ্চ ফলনশীল হয়ে
এখন জনপদে
0

খেতে সুস্বাদু এবং ভালো দাম পেলেও উচ্চ ফলনশীল অন্যান্য জাতের ধানের সাথে টিকতে না পেরে দিনদিন কমছে আবাদ। এমন বাস্তবতায় আমন মৌসুমের ধান নাজিরশাইল বোরো মৌসুমে আবাদ করে সফল হয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা মাঠ ও কৃষক পর্যায়ে তিনটি প্লটে এবার বোরো মৌসুমে নাজিরশাইল ধান আবাদ করে ফলন পেয়েছেন হেক্টরপ্রতি সাড়ে ৫ টনের অধিক। মাটি ও পাতায় জিংক সালফেট স্প্রে করে উৎপাদিত ধান করা হয়েছে জিংক সমৃদ্ধ। এতে প্রায় বিলুপ্তির পথে থাকা আমনের জাত নাজিরশাইল ধান ফিরেছে উচ্চ ফলনশীল হয়ে।

বাজারে বেশি দাম ও চাহিদা থাকে দেশীয় জাতের চিকন চালের। আমন মৌসুমের তেমনি একটি জাত নাজিরশাইল। উচ্চশ্রেণীর ব্যাপক আগ্রহের কারণে সুপারশপগুলোতে ও চাহিদার শীর্ষে থাকে এই চাল।

আলোর প্রতি সংবেদনশীল ও স্বল্প জীবনকালের এই ধান ‘স্বল্প আলোর প্রভাব’ ব্যবহার করে উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। ডিসেম্বরের ১৫ তারিখ থেকে জানুয়ারির ৩১ তারিখের মধ্যে চারা রোপণ করা হলে স্বল্প আলোর প্রভাব থাকে। গবেষণা মাঠ ও কৃষক পর্যায়ে তিনটি প্লটে পরীক্ষামূলক নাজিরশাইল চাষ করে হেক্টর প্রতি সাড়ে ৫ টনের অধিক ফলন পাওয়া গেছে বলে জানান গবেষকরা।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববদ্যিালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুস সালাম বলেন, ‘কিন্তু এই ধানকে ফটোপ্রেডিক ইনডাকশন ব্যবহার করে ব্যুরো মৌসুমে চাষ করা সম্ভব। ব্যুরো মৌসুমে সূর্যালোক ক্লিয়ার থাকায় ধানের চাষে ভ্যারাইটি হয়।’

গবেষকরা জানান, শুধু বোরো মৌসুমে আবাদই নয়, জিংক সালফেট স্প্রে করে নাজিরশাইল ধান জিংক সমৃদ্ধও করেছেন তারা। যা মানবদেহে জিংকের ঘাটতি জনিত রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববদ্যিালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের পিইচডি ফেলো ওমর আলী বলেন, ‘আমরা যদি শুধু জমিতে জিলক সালফেড প্রয়োগ করি, তাহলে ২৭পিপিএন পাব জিংক প্রতি কেজিতে। গাছের নির্দিষ্ট বৃদ্ধি পর্যায়ে পাতায় স্প্রে করলে মাটিতে প্রয়োগের চেয়ে বেশি জিংক পেয়ে থাকি।’

অধ্যাপক ড. ফারহানা জামান বলেন, ‘মাটিতে প্রয়োগের পাশাপাশি পাতায় প্রয়োগ করলে পাতা এটাকে অবজার্ভ করে নিচ্ছে।’

ময়মনসিংহ সদরের সুতিয়াখালি এলাকার কৃষক মুজিবুর রহমান ৫ কাটা জমিতে বোরো মৌসুমে নাজিরশাইল ধান আবাদ করে ভালো ফলন পেয়েছেন। অন্যান্য ধানের তুলনায় এই ধান ভালো হচ্ছে। পানি, সার তুলনামূলক কম লাগছে। আগামীতে সব জমিতে এই ধান আবাদ করবেন বলেও জানান তিনি। আগ্রহ দেখাচ্ছেন অন্য কৃষকেরাও।

নাজিরশাইল ধানের জীবনকাল ৯৫ থেকে ১০০ দিন। অর্থাৎ চাষাবাদ শুরুর ১২৫ থেকে ১৩০ দিনের মধ্যে ফসল ঘরে তুলতে পারবেন কৃষক। এ ছাড়া সেচ ও সারের ব্যবহারও তুলনামূলক কম লাগে। কেবল সার থেকেই বিঘাপ্রতি এক হাজার টাকা সাশ্রয় হবে বলে জানান গবেষকরা।

ইএ