আশুগঞ্জের মেঘনাপাড়ের ধানের এ হাট দেশের পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বৃহৎ চালের মোকাম হিসেবে পরিচিত। জেলার প্রায় আড়াইশো চালকলে ধানের যোগান আসে এখান থেকে। ফলে সরকার চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে সবেচেয়ে বেশি পরিমাণ ধান ও চাল সংগ্রহ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে।
জেলার খাদ্য গুদামগুলোর ধারণক্ষমতা ২১ হাজার ৫০০ টন। তবে সংরক্ষণ করা হয় অতিরিক্ত আরও অন্তত ৫ হাজার টন। এর ফলে গুদামগুলোতে জায়গা সংকটে প্রায়ই স্থবির হয়ে পড়ে ধান ও চাল সংগ্রহ কার্যক্রম। এছাড়া শতাব্দী পুরনো গুদামগুলোতে দীর্ঘমেয়াদে চাল সংরক্ষণেরও সুবিধা নেই। বাধ্য হয়ে বিতরণের পর অবশিষ্ট চাল পাঠাতে হয় চট্টগ্রামে কেন্দ্রীয় সংরক্ষণাগারে।
এ অবস্থায় ২০১৮ সালে আশুগঞ্জে নির্মাণ শুরু হয় আধুনিক স্টিল রাইস সাইলোর। ১ লাখ ৫ হাজার টন ধারণক্ষমতার সাইলোটিতে চালের পুষ্টিগুণ অটুট রেখে সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত চাল সংরক্ষণ করা যাবে। এটিকে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী খাদ্যশস্য সংরক্ষণাগার বলছে কর্তৃপক্ষ। তবে করোনা মহামারির পর অর্থনৈতিক মন্দাসহ নানা সংকটে বিলম্বিত হয় সাইলোর নির্মাণকাজ। এরইমধ্যে পুরো প্রকল্পের ৮৫ শতাংশ কাজ শেষে হয়েছে। বাকি রয়েছে জেটি, স্টিল স্ট্রাকচার, ব্যাগিং লোডিং ও বাল্ক ট্রাক রিসিভিংসহ আনুষঙ্গিক কিছু কাজ। এই সাইলো চালু হলে চাল সংগ্রহ ও সংরক্ষণে সংকট কেটে যাবে বলে জানিয়েছেন খাদ্য নিয়ন্ত্রক।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কানিজ জাহান বিন্দু বলেন, ‘যদি আমাদের সাইলোটা সম্পন্ন হয়ে যায় এবং কার্যক্রমে চলে আসে তখন আমরা আরও ভালোভাবে সংগ্রহ করতে পারবো। আমাদের মজুত ও স্থানের সংকটও কমে যাবে। তখন আমরা আরও বেশি পরিমাণে সংরক্ষণ করতে পারবো।’
কর্তৃপক্ষের দাবি, কারিগরি কিছু কাজের কারণে নির্ধারিত সময়ে সাইলোটির নির্মাণ পুরোপুরি শেষ করা যায়নি। তবে এখন পুরোদমে কাজ চলায় আগামী ১ বছরের মধ্যেই নির্মাণ শেষে সাইলোটি চালু করা যাবে বলে আশা জেলা প্রশাসকের।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, ‘এখান থেকে দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ চাল বিভিন্ন জায়গায় যায়। আমাদের বর্তমান যে ক্যাপাসিটি আছে তা খুবই নগণ্য। তবে আমরা আশা করছি সাইলো হয়ে গেলে ধান ও চাল আরো বেশি পরিমাণ সংরক্ষণ করতে পারবো। অনেকে অনেক কথা বলবে হয়তো তবে আমাদের ধান চাল সংগ্রহের যে টার্গেট তা আমরা প্রতিবারই ফিল আপ করতে পারি।’
নতুন স্টিল রাইস সাইলোটিতে বিন রয়েছে ৩০টি। প্রতিটি বিনে সংরক্ষণ করা যাবে ৩ হাজার ৫০০ টন চাল। আর নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৫৪০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।