বছরের পর বছর ধরে পাহাড়ে কৃষিকাজ করেন শিল্পী চাকমা। একসময় জুম চাষ করলেও ফলন কমছে ক্রমাগত। তাই পাহাড় কেটে তৈরি সমতল ভূমিতেই চাষাবাদ করেন এখন। কিন্তু পানির অভাবে ব্যাহত হচ্ছে চাষাবাদ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পাহাড়ি ঝিরি ও খালগুলোতে কমেছে পানির প্রবাহ। এমনকি খাবার পানির সংকটেও পড়তে হচ্ছে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে। শুধু তাই নয়, ফলন বাড়াতে ব্যবহার করা হচ্ছে সার-কীটনাশক, যার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। কিন্তু এত কিছুর পরও অধরাই থেকে থেকে গেছে আর্থিক স্বচ্ছলতা। কারণ পাহাড়ি সমাজে এখনো প্রকট মজুরি বৈষম্য।
কৃষাণীরা জানান, ছেলেদের মতোই সমান কাজ করলেও মজুরির বেলায় পুরুষ সদস্যদের মজুরি দেয়া হয় বেশি।
শিল্পী চাকমার মতোই অভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি রাঙামাটির কৃষাণীরা। পাশাপাশি স্বাস্থ্য সুরক্ষা, প্রযুক্তি জ্ঞানের অভাব ও নিরাপত্তা সংকট তো রয়েছেই।
তারা জানান, মেশিন দিয়ে ধান লাগানোর প্রযুক্তি এখনো পৌঁছায়নি পাহাড়ে। সরকার থেকে যদি সাহায্য দেয়া হয় তাহলে ধান লাগানো বা কাঁটা আরও সহজ হবে।
পাহাড়ি নারীদের জীবন-জীবিকার উন্নয়নে সরকারের পক্ষ থেকে কৃষি প্রশিক্ষণ, নারী কৃষি কার্ড, ভর্তুকি সুবিধা, মহিলা উন্নয়ন প্রকল্প ও ডিজিটাল কৃষি তথ্য সেবার মতো নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু এসব কর্মসূচিতে নারীদের অংশগ্রহণ সীমিত। তাই কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছেন নারীরা।
স্থানীয় কৃষাণীরা বলেন, ‘আমরা গরীব মানুষ। ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা করাতে হয়। এজন্য কাজ করতে হয় আমাদের। ছেলেরা আর মেয়েরা একই কাজ করে। আমাদের পারিশ্রমিকও সমান দেয়া হোক।’
এই বিষয়ে জেন্ডার বিশেষজ্ঞ এবং মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর বনশ্রী মিত্র নিওগী জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নারীরা কৃষিকাজে যেসব সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন, তা মোকাবেলায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। শুধু কর্মসূচি গ্রহণ করলেই হবে না, তা বাস্তবায়নেও জোর দিতে হবে বলে জানান তিনি।
এ সময় তিনি বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্যই কিছু ঘাটতি রয়েছে সেবা নিশ্চিত করার জায়গায়। এখনো অনেক ঘাটতি রয়ে গেছে। আমরা যে শিক্ষা, বাসস্থান, নিরাপত্তার কথা বলি এগুলো এখনো প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছায়নি। এ জায়গায় সরকারের নীতি, দায়িত্ব সবই আছে।’
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, ‘পাহাড়ি অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা ও কৃষির আধুনিকীকরণে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় বরাদ্দ সবসময়ই কম।’ পাহাড়ি অঞ্চলের কৃষির উন্নয়নে নারীদের আরও উদ্ভাবনী প্রশিক্ষণের আওতায় আনার ওপর জোর দেন উপদেষ্টা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, ‘এলাকায় আমরা ৪৪ শতাংশ অক্সিজেন জেনারেট করি। এখন আমাদের নদী, খাল, ঝিরিগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। এগুলো রিভাইব করে দেয়া জরুরি হয়ে গেছে কিন্তু আমার পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ে এতো টাকা নেই।’