মাসখানেক আগের মাঝ পদ্মার দৃশ্য। প্রমত্তা পদ্মার মাঝে ছোট-বড় অসংখ্য চর। উজান থেকে আসা পলিতে বাড়ছে চরের আয়তন। পাল্টাচ্ছে নদীর গতিপথ।
তবে ভিন্ন চিত্র বর্ষা মৌসুমে। অনবরত বৃষ্টিতে বেড়েছে নদীর পানি। দৃশ্যমান চর তলিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ডুবোচরের। বাম তীরের ডুবোচরের প্রভাব পড়েছে ডান তীরে। পানির তীব্র চাপে গভীর হচ্ছে নদীর ডান তীরের চ্যানেল। আগ্রাসী পদ্মার করাল গ্রাসে বিলীন হচ্ছে পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধ। বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি, গাছপালা, দোকানপাট। জাজিরা যেন এখন ভাঙনের জনপদ। আতঙ্কে শেষ সম্বলটুকু নিয়ে ছুটছেন নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে।
জাজিরার ভাঙন কবলিত মানুষজন বলেন, ‘আমাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। ভাঙার নমুনা দেখলাম, এর মাঝে আমরা নামাজও পড়তে পারিনি তার আগেই জিনিসপত্র নিয়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়ে গেছে।’
এদিকে চরের প্রভাবে পরিবর্তন হয়েছে নৌরুটের। এখন নদীর কেবলমাত্র শরীয়তপুর চ্যানেলটি সচল। অন্য পথে চর জেগে ওঠায় চ্যানেলটি নৌরুট ব্যবহারকারীদের ভরসা হয়ে উঠেছে।
নৌযান চালকরা বলছেন, ‘এগুলো হলো ডোবাচর। দেখে মনে হয় নদী, কিন্তু আসলে এগুলো চর। পানি কমলে আবার চর দৃশ্যমান হবে। চরের কারণে পানি সরে এদিকে চলে আসে। চর উঠে পদ্মা নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের মূল পদ্মা দিয়ে চলাচল করতে কষ্ট হয়। সময় বেশি লাগছে, আমাদের তেল খরচ ও বেশি লাগছে।’
পদ্মা সেতু থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত পদ্মার পানি ডান তীর ঘেঁষে প্রবাহিত হওয়ায় ডান তীর ভাঙন হুমকিতে রয়েছে। তাই নদীর গতিপথ ঠিক রাখতে মডেল তৈরির মাধ্যমে স্টাডি করার কথা জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান বলেন, ‘মাঝের চরটা বছর তিরিশ আগে ছিলো না। এদিক দিয়েই ছিলো পদ্মার মূল গতিপথ। এখন নদীর প্রবাহটা আবার এদিকে গতিশীল দেখা যাচ্ছে। এর প্রকৃত কারণ বের করার জন্য একটি মডেল এনালাইসিস করা ছাড়া বলার সুযোগ নেই।’
পদ্মার শরীয়তপুর অংশের ৫৫ কিলোমিটার অংশের অনেক স্থানেই জেগে ওঠেছে চর। যার প্রভাব পড়ছে তীরবর্তী জনপদে।