শ্রাবণের কান্নায় কোলাহল ভেঙে চিয়নিদ্রায় গুণী সাংবাদিক মমিনুল ইসলাম মঞ্জু। কুড়িগ্রামের প্রতিটি উপজেলা, ইউনিয়ন আর গ্রামে যার ছিল সরব উপস্থিতি, তিনিই আজ নিথর, কফিনবন্দি।
৬৯ বছরের কর্মময় জীবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের আগ পর্যন্ত গোটা জীবন তিনি উৎসর্গ করে গেছেন প্রান্তিক সাংবাদিকতায়। তিস্তা, ধরলা, দুধ কুমারের চর কিংবা দুর্গম পথ প্রান্তর থেকে গেল ৫০ বছর তিনি খুঁজে এনেছেন খবরের নুড়ি পাথর। মানুষের গল্প বলে যিনি হয়েছিলেন কুড়িগ্রামের মঞ্জু ভাই। ১৭ জুলাই সূর্যাস্তের আগেই তার জানাযায় সামিল হাজারও গুণগ্রাহী, অনুজ, স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষী। শেষে বিদায়ে কবরে এক মুঠো মাটি দিতে হাজির হন সাবেক সহকর্মীরাও।
স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘উনি কুড়িগ্রামের উন্নয়নের জন্য, কুড়িগ্রামের মাটি মানুষের জন্য যে কাজটি করেছেন, আসলে কুড়িগ্রামের একটি অপরিণীয় ক্ষতি হয়ে গেলো।’
১৯৫৭ সালে জন্ম নেয়া কাজ অন্তঃপ্রাণ এ মানুষটি মুক্তিযুদ্ধের আগে-পরে বলে গেছেন কুড়িগ্রামের দুঃখ, দুর্দশা ও সম্ভাবনার কথা। সংগঠিত করে নেতৃত্ব দিয়েছেন কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের। তার সমসাময়িক অনেকেই গত হওয়ায় কুড়িগ্রামের তৃতীয় প্রজন্মের সংবাদকর্মীরা তাকে ডাকতেন ‘মঞ্জু আঙ্কেল’ বলে। এ শহরে যার অনুজের সংখ্যা অসংখ্য।
স্থানীয় সাংবাদিকদের মধ্যে একজন বলেন, ‘অসংখ্য ঘটনা আছে, একদম মাঠ পর্যায়ে গিয়ে প্রান্তিক মানুষের সঙ্গে কথা বলে, সেখানে থেকে তিনি গল্প তুলে ধরেছেন।’
পেশা জীবনে কয়েকটি পত্রিকা ছাড়াও মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে। প্রযুক্তির সাথে মানিয়ে নিতে তিনি করেননি এতটুকু কার্পণ্য। একুশে, সিএসবি, সময় কিংবা সবশেষে এখন টেলিভিশন। সরাসরি সম্প্রচার আর প্রতিবেদন তৈরিতে, তিনি দেখিয়েছেন অসামান্য মুন্সিয়ানা। বছর দেড়েক আগে প্রিয়তমা স্ত্রীকে হারিয়ে একাকিত্বকেই আপন করে নিয়েছিলেন তিনি। জন্মের মাসেই তিন সন্তান রেখে আজ তার নিজেরও প্রস্থান। শোকস্তব্ধ সন্তানদের আকুতি, তাদের বাবাকে আল্লাহ যেন করেন জান্নাতের মেহমান।
মমিনুল ইসলাম মঞ্জুর ছেলে বলেন, ‘কুড়িগ্রামের সাংবাদিকতায় উনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করা পর্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে চালিয়ে গেছেন। আমি বেশি কিছু বলবো না, আমার বাবার রুহের মাগফেরাত কামনা করি।’
অবিরাম বৃষ্টির দিনে ইথারে ইথারে যখন মাগরিবের আজান, ঠিক তখনই সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে কবরের মেহমান হলেন উত্তর জনপদের প্রবীণ সাংবাদিক, এখন টেলিভিশনের কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি মমিনুল ইসলাম মঞ্জু। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে জীবনের মুক্তি খোঁজা গুণী এ গণমাধ্যমকর্মীর মৃত্যুতে শোকাতুর এখন পরিবার, বিদায়ী অভিবাদন।