২০ শিক্ষার্থী বাঁচিয়ে সাদা কাফনে চিরবিদায়; বাবা-মায়ের পাশে শায়িত শিক্ষিকা মাহরিন

নীলফামারী
নিহত শিক্ষিকা মাহেরিন চৌধুরী
এখন জনপদে
0

এক মহান শিক্ষকের আত্মত্যাগের সাক্ষী হলো বাংলাদেশ। রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ২০ জন শিক্ষার্থীকে বাঁচিয়ে চিরবিদায় নিলেন বাংলামিডিয়াম শাখার শিক্ষিকা মাহরিন চৌধুরী।

গতকাল (সোমবার) দুপুরে মর্মান্তিক সেই দুর্ঘটনায় দগ্ধ হন মাহরিন। নিজের জীবন বাজি রেখে একে একে শিক্ষার্থীদের ভবন থেকে বের করে আনেন। অথচ চাইলে নিজে আগে বেরিয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু আদর্শ শিক্ষক কখনো তার দায়িত্ব থেকে পিছু হটেন না, এই বিশ্বাসই যেন তার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত বহন করেছেন।

সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। আজ (মঙ্গলবার, ২২ জুলাই) বিকেল ৪টায় তাকে তার গ্রামের বাড়ি নীলফামারীর জলঢাকার বগুলাগাড়ি চৌধুরী পাড়ায় বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়।

জানাজার সময় শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছিল পুরো এলাকা। দুই সন্তান নিস্পন্দ, স্বামী মনসুর হেলাল বারবার ভেঙে পড়ছিলেন কান্নায়। চোখ মুছতে মুছতে বলছিলেন, ‘সন্ধ্যার ঠিক আগ মুহূর্তে কথা হয়েছিল। বলেছিল, ‘‘আসছি, অপেক্ষা করো।’’ কে জানতো সেটাই হবে শেষ কথা।’

মাহরিন চৌধুরী মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির কো-অর্ডিনেটর ছিলেন। রাজধানীতে থাকলেও গ্রামের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেননি কখনো। মাস-তিনেক আগে জলঢাকার বগুলাগাড়ি স্কুল অ্যান্ড কলেজে অ্যাডহক কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। স্কুল উন্নয়নের স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই স্বপ্ন ঢাকা পড়েছে সাদা কাফনে।

মঙ্গলবারের দাফনে অংশ নেন স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতাকর্মী, শিক্ষার্থী এবং অসংখ্য সাধারণ মানুষ। কেউ তার সাহসিকতার প্রশংসা করছিলেন, কেউবা বাকরুদ্ধ হয়ে তার আত্মত্যাগের গল্প শুনছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও মাহরিনের মৃত্যুতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। কেউ তাকে বলছেন ‘আদর্শ শিক্ষক’, কেউবা ‘গর্ব’। নীলফামারী জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মারুফ পারভেজ প্রিন্স তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘এই জেলা আজ এক কন্যার জন্য গর্বিত, আবার সেই কন্যাকেই হারিয়ে শোকে কাতর।’

ঘটনার সময় মাহরিন চৌধুরী ভবনের নিচে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের হাতে তুলে দিচ্ছিলেন শিশুদের। মুহূর্তেই প্রশিক্ষণ বিমানটি ভবনে আছড়ে পড়ে আগুন লেগে যায় চারদিকে। কিন্তু আগুনের ভয় জয় করে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের নিরাপদে বের করে দেয়ার চেষ্টা করে গেছেন তিনি।

এনএইচ