প্রশাসনের ‘খামখেয়ালিপনায়’ সামাজিক অপবাদের মুখে হবিগঞ্জের চার পরিবার

হবিগঞ্জ
হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়
এখন জনপদে
0

হবিগঞ্জে জুলাই আন্দোলনে সন্তান হারানো এক পরিবারসহ চারটি পরিবার পড়েছে গভীর শোক আর সামাজিক অপবাদের মুখে। তাদের পরিবারের সদস্যের মদ্যপানে মৃত্যু হয়েছে— এমন তথ্য প্রকাশ করে জেলা প্রশাসন। তবে ময়নাতদন্তের আগেই মদপানে মৃত্যুর বিষয়টি কীভাবে নিশ্চিত করলো প্রশাসন, এ নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ময়নাতদন্ত ছাড়া মদপানে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিতের কোনো সুযোগ নেই।

জুলাই আন্দোলনে সন্তান হারিয়েছেন রুবি রাণী শীল। বছর না ঘুরতেই অসুস্থতায় স্বামী রতন শীলও চলে গেছেন না ফেরার দেশে। শোকগ্রস্ত এ পরিবার যখন জীবনের কঠিনতম সময়ে, তখনই নতুন অভিযোগ এলো— মদ্যপানে মারা গেছেন রতন শীল।

রুবি রাণী শীল বলেন, ‘মদ খেয়ে মারা গেছে এটা মিথ্যা অপবাদ।’

গত ১৬ ও ১৭ জুলাই হবিগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকায় ৪ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ৩ জনই সনাতন ধর্মাবলম্বী, যাদের সৎকার সম্পন্ন হয় ১৭ জুলাই। কিন্তু পরদিন, তারা মদপানে মারা গেছেন— এমন পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিড়ম্বনায় পড়ে শোকাহত পরিবারগুলো, হেয় হতে হয় সামাজিকভাবে।

ভুক্তভোগী পরিবারের এক সদস্য আমিনুর রহমান রাকিব বলেন, ‘ফেসবুকে ছড়ানো এ কথাগুলো ভিত্তিহীন আর এগুলো আমাদেরকেও এলাকাবাসীর কাছে ছোট করছে।’

গত ১৮ জুলাই এ ঘটনার তদন্তে ৬ সদস্যের কমিটি গঠন করেন জেলা প্রশাসক। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে মদ পান করায় চার ব্যক্তি মারা গেছেন। অথচ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর জানায়, মদপানে মৃত্যুর বিষয়ে কোনো তথ্য তারা জেলা প্রশাসনকে দেয়নি।

হবিগঞ্জের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক সাজেদুর রহমান বলেন, ‘এ ব্যাপারে কোথাও কোনো দপ্তরে কোনো ধরনের লিখিত চিঠি আমরা পাঠাইনি। আর তাছাড়া মৃত্যর কারণ উদঘাটন করাটা এক্সপার্ট অপিনিয়ন বা ডাক্তারদের অপিনিয়নের বিষয়। আমার জায়গা থেকে কেউ মদ্যপান করে মারা গেছেন কি না সেটা বলার এখতিয়ার নেই।’

হাসপাতালের তথ্য বলছে, ৪ জনের মধ্যে কেউ কিডনিজনিত সমস্যায় আবার কেউ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। চিকিৎসকের মতে, ময়নাতদন্ত ছাড়া মৃত্যুর কারণ হিসেবে মদপানকে চিহ্নিত করা সম্ভব নয়।

হবিগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ফাইকা রহমান বলেন, ‘এভাবে তো আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারবো না পোস্টমোর্টেম রিপোর্ট ছাড়া যে, উনি অ্যলকোহল পয়জেনিংয়েই মারা গেছেন। এটা বলতে হলে আমাদের কেমিক্যাল অ্যানালাইসিস রিপোর্ট অবশ্যই লাগবে।’ 

স্থানীয়রা বলছেন, তথ্যপ্রমাণ ছাড়া এভাবে কাউকে সামাজিকভাবে হেয় করা উচিৎ নয়।

হবিগঞ্জ সুজনের সভাপতি এড. ত্রিলোক কান্তি চৌধুরী বিজন বলেন, ‘প্রশাসনের যেকোনো পর্যায় থেকেই হোক না কেন, তাদেরকে এরকম অপবাদ দিয়ে দেয়াটা খুবই দুঃখজনক। সবচেয়ে বড় কথা হলো তাদের হাসপাতালেও চিকিৎসা হয়েছে। সেখানে তো ডাক্তাররা বলেনি যে, তাদের বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশিদ বলেন, ‘এ ধরনের বিষয়গুলো আসলে এক্সপার্টদের হাতে ছেড়ে দেয়া উচিত।’

জেলা প্রশাসক বলেন, এ বিষয়ে সন্দেহমুক্ত হতেই কমিটি গঠন করা হয়েছে।

হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. ফরিদুর রহমানের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আসলে কী ঘটেছে সেটা জানার জন্য একটা কমিটি গঠন করা হয়েছে। আশা করি ওই কমিটি এটা উদঘাটন করতে পারবে।’

নির্দোষ কারো যেন সম্মানহানি না হয় সেদিকে সজাগ থাকার দাবি শহরবাসীর।

এসএইচ