ভিটে হারানোয় আহাজারি তীরবর্তী মানুষের। সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন স্বজন-প্রতিবেশীরাও। চোখের সামনে সর্বনাশা পদ্মায় বসতভিটা বিলীন হতে দেখে চোখের জল ধরে রাখতে পারছেন না জাজিরার উকিল উদ্দিন মুন্সি গ্রামের মঞ্জিলা বেগম।
মঞ্জিলার মতো আগ্রাসী পদ্মার হাত থেকে বসত ঘর আর মালামাল বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টা ভাঙন কবলিত মানুষের। প্রাণ বাঁচাতে বসতভিটা রেখেই ছুটছেন অজানার পথে। এরইমধ্যে জাজিরার ছাত্তার মাদবর বাজারের ১৩টি দোকান আর ১৭টি বসতঘর পদ্মায় চলে গেছে। সরিয়ে নেয়া হয়েছে ৫৬টি বসতঘর আর ৩৩টি দোকান। ভাঙন ঝুঁকিতে জাজিরার পদ্মা তীরের ৬ শতাধিক স্থাপনা। ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি দুর্গত এলাকার মানুষের।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ভাঙনে তাদের ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। এখন তাদের থাকার কোনো জায়গা নেই। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রতিবছরই এভাবে নদী ভাঙনের কবলে পড়তে হয় তাদের। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সাহায্য তারা পাননি।
ভয়াবহতা দেখাচ্ছে মেঘনাও। গোসাইরহাটের জালালপুরের তীরবর্তী এলাকায় তাণ্ডব চালাচ্ছে এ নদী। ভাঙন থেকে বাঁচতে সহায় সম্বল নিয়ে নদীপথেই অন্যত্র পাড়ি জমাচ্ছেন অনেকে। মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে নদী তীরে বসবাস করছেন কেউ কেউ। তাদেরই একজন হুমায়ুন সরদার। নদীতে বসতঘরের অর্ধেক চলে গেলেও বাকিটায় পরিবার পরিজনের সাথে ঝুঁকি নিয়েই দিন কাটাচ্ছেন।
হুমায়ুন সরদার জানান, তার ভিটে বাড়ি ভাঙতে ভাঙতে অল্প একটু বাকি আছে। যেটুকু বাকি আছে এটাও যেকোনো সময় ডুবে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি।
ভাঙন কবলিত মেঘনা পাড়ের মানুষজন জানান, ভাঙনের সময় যদি মানুষ ঘরে থাকে তাহলে মানুষসহ মারা যাবে এমন অবস্থা। কোন সাড়া শব্দ ছাড়াই পাড় ভেঙে নিয়ে চলে যায়।
ভাঙনের কথা অজানা নেই পানি উন্নয়ন বোর্ডেরও। জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগও ফেলছেন তারা। তবে, নদীর গতিপথ ঠিক রেখে স্থায়ী তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণ হলে ভাঙন রোধ সম্ভব বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান বলেন, ‘পদ্মা ও মেঘনার মতো বড় নদীগুলোর ভাঙন প্রকট। যার কারণে জরুরি ভিত্তিতে এখানে কাজ করলে ফলাফল পাওয়াটা খুব কষ্টসাধ্য অনেক সময় অসম্ভব হয়ে যায়। যার কারণে এখানে সমাধানই হচ্ছে স্থায়ীভাবে কোনো প্রটেক্টিভ ওয়ার্ক করা।’
শরীয়তপুরের ৭৭ কিলোমিটার এলাকা ঘিরে রেখেছে পদ্মা ও মেঘনা। যার অধিকাংশ এলাকাই ভাঙন প্রবণ। ভাঙন রক্ষায় প্রায় ২৬ কিলোমিটার এলাকায় স্থায়ী রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।