খুলে দেয়া হলো কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি জলকপাট

কাপ্তাই বাঁধের জলকপাট
এখন জনপদে
0

রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাঁধের ১৬টি জলকপাট ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেয়া হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর বিপৎসীমায় পৌঁছে যাওয়ায় বাঁধের ১৬টি স্পিলওয়ে আজ (মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট) মধ্যরাতে খুলে দেয়া হয়। বাঁধের উজান অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এবং ভাটি অঞ্চলে এর কোনো প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছেন কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ।

এই পরিস্থিতিতে বাঁধের ভাটি অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সতর্কতা দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে চট্টগ্রামের কর্ণফুলি নদী তীরবর্তী চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া ও রাউজানের আশপাশের নিম্নাঞ্চলগুলোতে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের সতর্কও করা হয়েছে। এজন্য এ বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক প্রস্তুতি নেয়ার জন্য এ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

কাপ্তাই লেকের পানির ধারণ ক্ষমতা ১০৯ ফুট। সমুদ্রপৃষ্ট থেকে লেকের পানি ধারণক্ষমতা ১০৮ ফুট। অর্থাৎ বিপৎসীমা ১০৮ ফুট ধরা হয়। গতকাল দিবাগত রাত ১২টায় পানির উচ্চতা ১০৮.৫ ফুটের বেশি হওয়ায় পানির উচ্চতা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৬টি জলকপাট খুলে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

এদিকে থেমে থেমে ভারী বৃষ্টিপাত আর উজানের ঢলে কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বেড়ে চলছে প্রতিনিয়ত। এরইমধ্যে রাঙামাটি সদর, লংগদু, বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি ও কাপ্তাই উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। সেখানে যাতায়াত ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে শুরু করেছে। দুর্ভোগে পড়েছেন হাজারো মানুষ। ইতোমধ্যেই একফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে পর্যটন ঝুলন্ত সেতু। ভ্রমণ করতে না পেরে দেশের দূরদূরান্ত থেকে আসা পর্যটকরা ক্ষোভ আর হতাশা নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন। বিরূপ প্রভাব পড়েছে পর্যটন খাতেও।

এমতাবস্থায় কাপ্তাই হ্রদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত মতে গতকাল রবিবার রাতে জারি করা কেন্দ্রটির ব্যবস্থাপকের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১৬টি গেট ছয় ইঞ্চি করে খুলে দিলে তা থেকে সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি নিষ্কাশন করবে। পরিস্থিতি বিবেচনায় গেট খোলার পরিমাণ বাড়ানো হতে পারে। এরআগে গত বছর কাপ্তাই হ্রদে পানির উচ্চতা বেড়ে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হলে গেল বছরের ২৫ আগস্ট একইভাবে ১৬টি জলকপাট ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেয়া হয়।

বর্তমানে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিট দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে ২২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়ে জাতীয় গ্রিডে সঞ্চালন হচ্ছে। একইসাথে এই পাঁচ ইউনিট দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে ৩২ হাজার কিউসেক পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে কর্ণফুলি নদীতে। সব মিলিয়ে এখন প্রতি সেকেন্ডে ৪১ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলি নদীতে নিষ্কাশন হচ্ছে। তবে সতর্কতা থাকলেও ভাটি এলাকা চট্টগ্রাম অঞ্চলে এর কোনো প্রভাব পড়েনি।

চলতি মৌসুমে প্রথম বারের মতো গেল রোববার (৩ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টায় পানির উচ্চতা ১০৭ ফুটে পৌঁছে। এরপরই হ্রদে পানি বাড়ার গতি লক্ষ্য করে তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে হ্রদের পানির গতি স্থিতিশীল থাকায় ১৯ ঘণ্টা পিছিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু এরআগেই আজ রাত ১২টায় ১৬টি জলকপাট ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেন কর্তৃপক্ষ।

কর্ণপুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মাহমুদ হাসান বলেন, ‘আমরা কাপ্তাই বাঁধের ধারণক্ষমতার সমান ১০৯ ফুট পানি হ্রদে ধরে রাখতে চাই। পানি ১০৮ ফুট উচ্চতায় পৌঁছালে বিপদসীমা বলে চিহ্নিত করা হয়। গতকাল রাতে ১০৮ দশমিক ০৫ ফুট হওয়ায় রাত ১২টায় পূর্বঘোষিত সময় সকাল ৯টার আগেই রাত ১২টায় ১৬টি জলকপাট খুলে দিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘এতে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি নিষ্কাশন হচ্ছে। এরসাথে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট দিয়ে আগে থেকেই আরও ৩২ হাজার কিউসেক পানি বের হয়ে যাচ্ছে হ্রদ থেকে। সব মিলিয়ে ৪১ হাজার কিউসেক পানি ছাড়া হলেও ভাটি অঞ্চলের কোনো প্রভাব পড়েনি।’

সেজু