ভুয়া অগ্রগতি দেখিয়ে ৪৭ লাখ টাকার বিল, আজমিরীগঞ্জে প্রকৌশলী বদলি

হবিগঞ্জ
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
এখন জনপদে
0

দাপ্তরিক হিসাবে কাজ হয়েছে ৬৫ শতাংশ। তবে ৮৩ শতাংশ অগ্রগতি দেখিয়ে ২০ লাখ টাকার বিল উপস্থাপন করেন উপজেলা প্রকৌশলী। অন্য দু'টি বিলে অনুমোদন চান আরও ২৭ লাখ টাকার। হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ এলজিইডি অফিসের প্রকৌশলীর এমন বিলে স্বাক্ষর করেননি উপজেলা নির্বাহী অফিসার। এর প্রেক্ষিতে বদলি আদেশে দ্রুত উপজেলা ছাড়েন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী।

হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জের শিবপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে। কিছুদিন কাজ চললেও প্রায় এক বছর ধরে তা বন্ধ রয়েছে।

এ বিষয়ে আজমিরীগঞ্জ শিবপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সোহেল চৌধুরী বলেন, ‘আমাকে এ ব্যাপারে কোনো কাগজপত্র দেয়া হয়নি। শুধু একটা ডিজাইন দেয়া হয়েছে ডিজাইন দেখে তো সব কিছু বোঝা যায় না।’

একই চিত্র চৌধুরী হামদু মিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও। যদিও সম্প্রতি সময়ে কিছু কাজ শুরু করেছেন ঠিকাদার। মিজাজিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র আরও করুণ। প্রধান শিক্ষকের কক্ষের ছাদ হয়েছে, তবে গত দুই বছরে শুরু হয়নি টয়লেটের কাজ।

এ নিয়ে আজমিরীগঞ্জ মিজাজিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক রোকসানা পারভীন বলের, ‘৫০ শতাংশের মতো কাজ হয়েছে, ছাদ হয়েছে, পিলার হয়েছে। প্রধান শিক্ষকের ওয়াশরুম যেটা তা একেবারেই শুরু হয় নাই।’

২০২২-২৩ অর্থবছরে পিইডিপি-৪ প্রকল্পে উপজেলার ৪টি বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর এবং ৫টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কক্ষ ও টয়লেট নির্মাণের জন্য ২৩ সালের জুলাইয়ে কাজ শুরু করে উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ। কাজ পান মোহাম্মদ গোলাম ফারুক নামে এক ঠিকাদার। ৬২ লাখ টাকার সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজে তিন ধাপে বিল তুলে নেন ৩২ লাখ টাকা।

উপজেলা এলজিইডি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই শেষে এ প্রকল্পে কাজের অগ্রগতি ৬৫ শতাংশ। অথচ, এপ্রিলেই ৮৩ শতাংশ অগ্রগতি দেখিয়ে আরও ২০ লাখ টাকার বিল তোলার চেষ্টা করেন প্রকৌশলী আয়েশা আখতার। ঠিকাদারের অন্য দুটি কাজের প্রায় ২৭ লাখ টাকার বিলও ইউএনওর কাছে উপস্থাপন করেন তিনি।

তবে, অসামঞ্জস্যপূর্ণ বিলগুলোর অনুমোদন দেননি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। নৈতিক দায়িত্ববোধ থেকেই এমনটা করেছেন বলে জানান তিনি।

হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিবিড় রঞ্জন তালুকদার বলেন, ‘আমার কাছে গ্রাউন্ড রিপোর্ট ছিল। সে পরিমাণে কাজ হয়নি। এ প্রেক্ষাপটেই আমি সময় নেই এবং তদন্ত করি। মাঠে দেখতে পাই বিলগুলো দেয়ার সময় আসেনি তাই বিলগুলো ফেরত দেই।’

হবিগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আয়সা আক্তার বদলি আদেশে হবিগঞ্জ ছেড়েছেন বলে জানা যায়। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ফোনে এ ধরনের অফিশিয়াল বিষয়ে কথা বলতে আগ্রহ পাচ্ছি না। আমাদের অফিশিয়াল কিছু বাধ্যবাধকতা আছে। আমি ফেস টু ফেস পরে জানাবো।’

এদিকে ঠিকাদার বলছেন, অতিরিক্ত বিল বাদ দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চাইলে আংশিক অনুমোদন দিতে পারতেন। তার দাবি, ইউএনও ক্ষোভ বা ক্ষমতা দেখিয়ে বিলগুলো ফেরত পাঠিয়েছেন। এ বিষয়ে হবিগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী ফরিদুল ইসলাম জানান, অতিরিক্ত বিল প্রদানের কোনো বিধান নেই। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ঠিকাদার মো. গোলাম ফারুক বলেন, ‘এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী ঠিকাদারদের কাজের অর্ধেক পেমেন্টও করেনি। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে।’

সচেতন মহল বলছেন, ইউএনওয়ের উদ্যোগে অনৈতিক বিল আটকে গেলেও জড়িতদের বিরুদ্ধে এখনও নেয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা। ভবিষ্যতে বিল পরিশোধে সংশ্লিষ্টদের আরও দায়িত্বশীল হওয়ার দাবি সবার।

সেজু