চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ৭২টি লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে মাত্র ১৬টিতে আছে গেটম্যান। বাকি ৫৬টির একটাতেও নেই কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
রেলওয়ে পুলিশের তথ্য বলছে, গত ২০ মাসে এ পথে মৃত্যু হয়েছে ৩০ জনের। এর মধ্যে শুধু গত বছরেই মারা গেছেন ১৭ জন। এছাড়া চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে আরও ১৩ জনের। শুধু মানুষ নয়, এমন অব্যবস্থাপনায় কাটা পড়েছে বন্যপ্রাণীও।
এ রুটে নিয়মিত ট্রেন চালান লোকোমাস্টার এটিএম আলাউদ্দীন ভুঁইয়া। সাক্ষী হয়েছেন বহু অভিজ্ঞতার। জনসাধারণের অসচেতনতার কারণেই মূলত অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন তিনি।
ট্রেন চালক এটিএম আলাউদ্দীন ভুঁইয়া জানান, ১ সেকেন্ড আগে পার হয়ে যেতে পারলে মনে করে যেন বিশাল কিছু করে ফেলেছে। এ ধরনের মনোভাবের কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। যেখানে গেটম্যান নেই সেসব এলাকায় দেখা যায় গাড়ি নিয়ে বা দৌড়ে পার হতে গিয়ে অনেকে আটকে যায় বা দুর্ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, অরক্ষিত ক্রসিং পারাপারের সময় ভয় নিয়ে চলাচল করতে হয় তাদের। অনেক সময় ট্রেন হর্ন না দেয়ায় দুর্ঘটনা এড়ানো যায় না।
আরও পড়ুন:
স্থানীয় বাসিন্দা ও চালকরা জানান, কোনো ধরনের সংকেত না থাকায় অনেকসময় বুঝা যায় না ট্রেন আসছে কি না। এমনকি ট্রেনের হর্নও দেয় না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। তাদের দাবি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে যেন গেটম্যান দেয়া হয়।
এদিকে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর বলছে, কক্সবাজার জেলার চারটি উপজেলায় রেললাইন অতিক্রম করেছে ৩৫টি সড়কের ৩৬টি পয়েন্ট। এর মধ্যে মাত্র ৩টিতে গেটম্যান আছে। এলজিইডির দাবি, সড়কগুলো আগে থেকেই ছিল বরং রেলপথ হয়েছে পরে। রেললাইন হওয়ার পর তারা নতুন করে কক্সবাজারে কোন সড়ক নির্মাণ করেনি।
কক্সবাজার এলজিইডির সহকারী প্রকৌশলী সাফায়াত ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘আমরা যদি নতুন সড়ক করতে চাই তাহলে হয়তো নতুন সড়ক নেয়ার ব্যবস্থা করতে পারবো। তবে রেললাইন হওয়ার পর আমরা কোনো সড়ক নির্মাণ করিনি। রেললাইনকে ক্রস করে কোনো সড়ক নির্মাণ করিনি। আমাদের বর্তমান যে ৩৫টি সড়কের কথা বললাম এগুলো রেললাইন নির্মাণের আগেই আছে।’
কিন্তু রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কর্তৃপক্ষ বলছে, এলজিইডি যেখানে সেখানে রাস্তা করেছে, ফলে ক্রসিং সীমিত রাখা ছাড়া উপায় নেই।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক মো. সুবক্তগীন বলেন, ‘যেখানে সেখানে ইউনিয়ন পরিষদের রাস্তা করে। আমাদের তো লেভেল ক্রসিং এর একটা লিমিট আছে যে আমরা কয়টা গেট দিতে পারবো। হয়তো মাটির রাস্তা ছিলো পরে পাকা রাস্তা হয়েছে। একটু পরপর লেভেল ক্রসিং গেট দিলে তো আমরা ট্রেন চালাতে পারবো না। এটা তো সম্ভব না। আমাদের ট্রেন তো দ্রুত গতিতে চলে।’
কক্সবাজার রেলপথ দেশের পর্যটনে নতুন দিগন্ত খুললেও অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং রয়ে গেছে মৃত্যুফাঁদ হয়ে। সচেতনতা, সমন্বয় আর নিরাপত্তা ব্যবস্থা না বাড়ালে দুর্ঘটনার প্রাণহানির তালিকা আরও দীর্ঘ হবার শঙ্কা স্থানীয়দের।