শুধু নৌকাবাইচ নয়, এ উৎসব ঘিরে বসেছে শতাধিক খাবার, খেলনা ও প্রসাধনীর দোকান। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষ মেতে ওঠে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে। রাস্তার দু’পাশে বিভিন্ন গ্রামীণ খেলনা, খাবার ও প্রসাধনীর দোকান যেন শিশুদের বাড়তি আনন্দে ভরিয়ে তোলে।
হেলাচিয়া বাজার বণিক সমিতির উদ্যোগে আয়োজিত ইছামতী নদীতে এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় মানিকগঞ্জ ও পার্শ্ববর্তী টাঙ্গাইল জেলার ১০টি নৌকা। প্রতিযোগিতা শেষে প্রতিটি দলকেই পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয় একটি করে ৩২ ইঞ্চি রঙিন এলইডি টেলিভিশন।
শিশু দর্শক মিথিলা আক্তার (১০) উচ্ছ্বাস ভরা কণ্ঠে বলে, ‘আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে নৌকা দৌড় দেখে। আর মেলায় বেলুন কিনেছি, খুব মজা হচ্ছে। যাওয়ার সময় খেলনা কিনে বাড়ি যাবো।’
নৌকাবাইচে অংশ নিতে আসা মানুষের মুখেই ফুটে উঠেছে আনন্দের ঝলক। মহিলা দর্শনার্থী রাবেয়া খাতুন বলেন, ‘অনেক দিন পর এমন আয়োজন দেখে মন ভরে গেছে। আমরা ছোটবেলায় দেখতাম, এখন আমাদের সন্তানদেরও দেখাতে পারছি। খুব ভালো লাগছে।’
আরও পড়ুন:
স্থানীয় কৃষক আজিজুল হক বলেন, ‘আমরা প্রতিবছর এমন আয়োজন চাই। সবাই একত্রিত হয়, আনন্দ ভাগাভাগি হয়। অনেক বছর পর আমাদের গ্রামের ঐতিহ্য আবার জেগে উঠল।’
টাঙ্গাইল থেকে প্রতিযোগী নৌকা দলের মাঝি সেলিম মিয়া বলেন, ‘আমরা খুব উৎসাহ নিয়ে এসেছি। দীর্ঘদিন পর এত মানুষের সামনে নৌকা বাইচ করতে পেরে গর্ব হচ্ছে। জেতা-হারা বড় কথা নয়, মানুষকে আনন্দ দিতে পারাই আমাদের সার্থকতা। আমরা অনেক জায়গায় এ বাইচে অংশ নেই। আর প্রায় সব প্রতিযোগিতায় আমরা বিজয়ী হই।’
খাবারের দোকানদার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এত বছর পর নৌকাবাইচ হচ্ছে। আজকে বিক্রি খুব ভালো হচ্ছে। সকাল থেকে দোকানে ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছি। আমাদের মতো ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য এমন আয়োজন আশীর্বাদ।’
প্রসাধনীর দোকানি শাহিনা বেগম বলেন, ‘মেলায় নারী-শিশুর ভিড় বেশি। তারা সাজগোজের জিনিস কিনছে। এমন আয়োজন হলে আমাদের ব্যবসারও লাভ হয়, আবার গ্রামও আনন্দে ভরে ওঠে।’
নৌকাবাইচ আয়োজক কমিটির সভাপতি গাজী হাবিব হাসান রিন্টু বলেন, ‘দীর্ঘ ১৮ বছর পর হেলাচিয়া গ্রামে আবারো নৌকাবাইচের আয়োজন গ্রামীণ জনপদকে ফিরিয়ে দিয়েছে সেই হারানো প্রাণচাঞ্চল্য। অনেক বছর পর আবার নৌকাবাইচের আয়োজন করতে পেরে আমরা আনন্দিত। গ্রামের মানুষ এ প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে উৎসবে মেতে উঠেছে।’