বছর না ঘুরতেই বন্যায় তিন দফায় ডুবলো ফেনী

ফেনিতে ২০২৪ সালের ভয়াবহ বন্যা
এখন জনপদে
0

২০২৪ সালের ২১ আগস্ট, ফেনীসহ আশপাশের জেলা ডুবে গিয়েছিলো ভয়াবহ এক বন্যায়। প্রাণ হারায় অনেকে, নিঃস্ব হয় হাজারো পরিবার। বছর পার না হতেই ২০২৫-এর ঘূর্ণিপাকে তিন দফায় ডুবলো জনপদ। বারবার এ বন্যার পেছনে কী কারণ? মুক্তির উপায়ই—বা কী?

উজান থেকে নেমে আসা সীমান্তবর্তী তিন নদী মুহুরী, কহুয়া আর সিলোনিয়া। গ্রীষ্মে এসব নদী মুমূর্ষু অবস্থায় থাকলেও বর্ষায় রূপ নেয় ধ্বংসের প্রতীকে। নদীর এমন রূপ বদলেই, আতঙ্কে থাকেন লাখো মানুষ।

২০২৪-এর ২১ আগস্টের বন্যায় ফেনী, পরশুরাম, ফুলগাজীসহ চার জেলায় প্রাণ হারিয়েছিল ৩৯ জন। ভেসে গিয়েছিল প্রায় ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকার সম্পদ। চলতি বছরও নতুন করে তিন দফা বন্যায় ক্ষতি হয়েছে আরও ২৩৮ কোটি টাকার সম্পদ।

ফেনীর পরশুরাম বল্লারমুখা সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করা মুহুরী নদীর ভারতের অংশে প্রশস্ততা প্রায় ২৫০ মিটার। তবে বাংলাদেশ প্রান্তের ফুলগাজী অংশে এসে তা দাঁড়ায় মাত্র ৩০ মিটারে। এতে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে, তৈরি হয় বন্যার ।

নদী ভাঙনে গেলো ৯ বছরে, ফেনীর বড় তিনটি নদীর গা ঘেঁষা ১২২ কিলোমিটার বাঁধের ২১৪টি স্থানে ভেঙেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে প্রায় ৮ হাজার ৮০৭ কোটি টাকার প্রকল্প। স্থানীয়রা বলছেন, মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন হলে, আর নদী তার প্রশস্ততা ও গভীরতা ফিরে পেলে কমবে নদীগুলোর আগ্রাসী রূপ।

স্থানীয়রা জানান, অপরিকল্পিত ব্রিজ নির্মাণের কারণে পানি বাধা পায়। এছাড়াও প্রশাসনের বিভিন্ন অপরিকল্পিত কাজের জন্যই এ সমস্যা তৈরি হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড যদি সঠিক সময়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতো তাহলে গত বছর এমন পরিস্থিতি তৈরি হতো না বলে জানান স্থানীয়রা।

আরও পড়ুন:

শুধু বর্ষায় নয়, শুষ্ক মৌসুমেও দুঃখ পিছু ছাড়ে না নদী পাড়ের মানুষের। উজান থেকে পানি আসা বন্ধ হয়ে গেলে, তখন শুরু হয় ফসলের জন্য পানির হাহাকার। এতে ব্যাহত হয় কৃষি, বাড়ে আর্থিক দুরবস্থা।

পানি যাওয়ার পথকে সুগম করে নদীকে তার গতিপথ ফিরিয়ে দিলে তবেই বন্যার সমস্যার সমাধান হতে পারে বলে জানালেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিদ্যার শিক্ষক, আর বিষয়টির সঙ্গে একমত হয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগের কথা জানালেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ,ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগ অধ্যাপক ড.মুহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহ বলেন, ‘ফেনি অঞ্চলের বেশিরভাগ নদীগুলো ভারত, আসাম বিভিন্ন জায়গা থেকে এসেছে এবং এগুলো মিসেছে বে-অব-বেঙ্গলে। পানি প্রবাহ হওয়ার চ্যানেলগুলো আস্তে আস্তে সরু হয়ে গেছে।’

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী আকতার হোসেন বলেন, ‘৭ হাজার ৩৪০ কোটি টাকার প্রকল্পতে মেইন অবজেক্ট হলো নদী খনন করে পানি বের হওয়ার মতো পর্যাপ্ত জায়গা করে দেয়া। যে ছোট ছোট ব্রিজের জন্য পানি বাধা পায় তার রির্পোট করা হবে।’

সীমান্তের ওপারে পানি ছাড়লে তলিয়ে যায় জনপদ, আর শুকনো মৌসুমে পানি আটকে রাখলে হাঁসফাঁস করে কৃষি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন সুস্পষ্ট ও টেকসই পরিকল্পনা এবং দ্বিপাক্ষিক সমাধানই পারে এই দুর্যোগ চক্র থেকে মুক্তি দিতে।

এফএস