কপোতাক্ষ নদ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নদ। এর উৎস মাথাভাঙ্গা নদী থেকে শুরু হয়ে চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, যশোর, সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলা অতিক্রম করে সুন্দরবনে গিয়ে শেষ হয়। কপোতাক্ষ ছাড়াও এ অঞ্চলের নদ নদীর উপর নির্ভরশীল কয়েক লাখ মানুষ।
সাতক্ষীরার কপোতাক্ষ পাড়ের বাসিন্দা জেলে সদেব। প্রতিদিন নদে জাল ফেললেও এখন আর আগের মতো মাছ মেলে না। একই অবস্থা কপোতাক্ষ অববাহিকার হাজারো জেলের। জেলেরা জানান, নদীতে আর আগের মতো মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। নদীতে লোনা পানির আধিক্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রায় এক দশক আগে মৃতপ্রায় কপোতাক্ষ নদের কিছু অংশ খনন করা হয়। সেসময় নদের প্রাণ ফেরার পাশাপাশি গতি এসেছিল তীরবর্তী জমির চাষাবাদে। কিন্তু সেই সুফল স্থায়ী হয়নি। নদের উজান অংশে পানি বদ্ধ থাকায় জন্মেছে কচুরিপানা। আর অবৈধ সাঁকো ও মাছ শিকারের জন্য নেট পাটা স্থাপনের ফলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পানির প্রবাহের স্বাভাবিক গতি। এতে পলি জমে যশোর, সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলার কিছু এলাকার বৃষ্টির পানি নামতে না পারায় তৈরি হচ্ছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা। ফলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এসব এলাকার ফসল আবাদ।
তালা উপজেলা পানি কমিটি সাধারণ সম্পাদক মীর জিল্লুর রহমান বলেন, ‘এ নদীর সঙ্গেই আমাদের প্রাণ, এর সঙ্গে জড়িত আমাদের যাতায়াত। নদীর পানি আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে। পানি না থাকলে এলাকার কোনো স্ট্রাকচারই থাকবে না।’
নদী ও পানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হাশেম আলী বলেন, ‘নদীর মধ্যে যদি একটি প্রণালি খনন করা যায় তাহলে জলাবদ্ধতা কিছুটা কমতে পারে।’
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের দাবি, অপরিকল্পিত ঘের ও বাঁধের কারণে ব্যাহত হচ্ছে পানি প্রবাহের স্বাভাবিক গতি। আর নদীর উপর থেকে সকল অবৈধ স্থাপনা সরানোর কথা বলছেন জেলা প্রশাসক।
পাউবো বিভাগ-২ সাতক্ষীরা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দিন বলেন, ‘ঘের নির্মাণ করা হয়েছে এবং এর সঙ্গে খালের কোনো কানেক্টিভিটি নেই। বছরের দীর্ঘ সময় এগুলো পানি দ্বারা পূর্ণ থাকে। অতি বৃষ্টির কারণে ঘের গুলো একটি আরেকটির সঙ্গে কানেক্ট হয়ে একটি বিশাল এলাকা পানির নিচে দেখা যায়।’
জেলা প্রশাসক সাতক্ষীরা মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, ‘বর্ষার শুরুতেই আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। উপজেলা ও ইউনিয়ন ভিত্তিক কমিটি তৈরি করেছি। জলাবদ্ধতা নিরসনে তাদের উদ্যোগ নেয়ার ইন্সট্রাকশন দেয়া হয়েছে।’