কুমিল্লায় দিনমজুর নজিরের বিচ্ছিন্ন হাত জোড়া দিয়ে মাইলফলক তৈরি চিকিৎকদের

কুমিল্লা
কুমিল্লা ট্রমা সেন্টার ও দিনমজুর নজির
এখন জনপদে
0

করাতকলে কাঠের গুঁড়ি নামাতে গিয়ে হাত বিচ্ছিন্ন, অতঃপর হাতসহ রোগীকে নেয়া হয় হাসপাতালে। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে জোড়া লাগে হাত। এমন জটিল অস্ত্রোপচার হচ্ছে খোদ কুমিল্লায়, আর একে মাইলফলক হিসেবে দেখছেন চিকিৎসাবিদরা। তার বলছেন, এ ধরনের চিকিৎসার পরিধি বাড়ানো গেলে কোনো রোগীকে আর ঢাকা বা দেশের বাইরে যেতে হবে না।

হতদরিদ্র দিনমজুর নজির আহমেদ দৈনিক ৭০০ টাকায় কাজ করতেন কুমিল্লা বরুড়ার একটি করাতকলে। চলতি মাসের ২ তারিখ ট্রাক থেকে গাছের গুঁড়ি নামাতে গিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তার ডান হাত।

বিচ্ছিন্ন হওয়া হাত পলিথিনে ভরে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে নেয়া হয় কুমিল্লার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শে সেখান থেকে পাঠানো হয় কুমিল্লা ট্রমা সেন্টারে।

নজির আহমেদের একজন সহকর্মী বলেন, ‘গাড়ি থেকে গাছ নামাচ্ছিলাম। হঠাৎ করেই ওপর থেকে একটি গাছ নজির ভাইয়ের দিকে আসে। গাছের নিচে তার হাত পরে শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।’

সেদিন রাতেই প্লাস্টিক সার্জারি বিশেষজ্ঞদের একটি দল প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে জটিল অস্ত্রোপচার চালান। জোড়া লাগানো হয় বিচ্ছিন্ন হওয়া হাত। বিশেষজ্ঞ দলের নেতৃত্ব দেন ময়নামতি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. কামরুল ইসলাম মামুন।

নজির আহমেদ বলেন, ‘এখানে আসার পর ডাক্তাররা তাদের সম্পূর্ণ চেষ্টা করেছে আমাকে সুস্থ স্বাভাবিক করার জন্য।’

কুমিল্লার ময়নামতি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. মো. কামরুল ইসলাম মামুন বলেন, ‘একটি আর্টিফিশিয়ালভাবে করতে গেলে মিনিমাম তিন থেকে চার লাখ টাকা খরচ হবে। কোনো কোনো সময় ২৫ থেকে ২৬ লাখ টাকা পর্যন্ত হয়। সেখানে রিপ্লান্টেশনে তিন চার লাখ টাকার কিছুই না।’

চিকিৎসক জানায়, এ ধরনের অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সময়। রোগী দ্রুতসময়ের মধ্যে হাসপাতালে আসায় অঙ্গটি জোড়া লাগানো সম্ভব হয়েছে। রোগীর আর্থিক সংকট থাকলেও, অস্ত্রোপচারের সফলতায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয় বলেও জানানো হয়।

আরও পড়ুন:

ডা. মো. কামরুল ইসলাম মামুন আরও বলেন, ‘পেশেন্ট যদি ছয় ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছাতে পারে তাহলে আমরা অস্ত্রোপচার করে আগের মতো বা কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারবো। কুমিল্লার বাহিরে কিছু ইনস্টিটিউটে কাজ চলছে।’

কুমিল্লা ট্রমা সেন্টার ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক মো. আবদুল হক বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমরা পাঁচজন এমন রোগী পেয়েছি। এ ট্রমা সেন্টারের উদ্দেশ্য হলো আর্জেন্ট রোগীগুলো যেন আমরা চিকিৎসা দিতে পারি।’

এদিকে, বিচ্ছিন্ন অঙ্গ জোড়া লাগানোর এ সফলতাকে মাইলফলক হিসেবে দেখছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। এটি দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় রোগীদের আস্থা বাড়াবে বলেও দাবি সিভিল সার্জনের।

কুমিল্লা সিভিল সার্জন আলী নুর মোহাম্মদ বশির বলেন, ‘এটি চিকিৎসা ব্যবস্থায় মাইলফলক। কুমিল্লায় যদি একটি রোগীর চিকিৎসা হয় তাহলে সে ঢাকা বা চট্টগ্রামে যাবে কেন।’

এর আগে গেলো ২৬ জুলাই কুমিল্লার আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালেও অঙ্গ জোড়া লাগানোর সফল অস্ত্রোপচার হয়। তবে চিকিৎসাবিদরা বলছেন, অঙ্গ জোড়া বা প্রতিস্থাপনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন না হলে ঘটতে পারে প্রাণহানিও।

এফএস