টাঙ্গাইলের বাজারে উঠছে জিআই স্বীকৃতি পাওয়া মধুপুরের আনারস

টাঙ্গাইল
ক্ষেত থেকে আনারস তুলছেন এক চাষি
কৃষি , গ্রামীণ কৃষি
এখন জনপদে
1

টাঙ্গাইলের বাজারগুলোতে উঠতে শুরু করেছে জিআই স্বীকৃতি পাওয়া ঐতিহ্যবাহী মধুপুরের আনারস। গত বছরের চেয়ে দাম কিছুটা বাড়লেও তেমন লাভ হচ্ছে না বলে জানান চাষিরা। ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে আনারস থেকে যে খাদ্যদ্রব্য তৈরি হয় এমন কারখানার দাবি তাদের। জেলা কৃষি কর্মকর্তা বলছেন, আনারস থেকে খাদ্যদ্রব্য তৈরির কারখানা করার পরিকল্পনা আছে তাদের।

টাঙ্গাইল মধুপুরের গারোবাজার গ্রামের আনারস চাষি বিশ্বাস শেখ। চলতি মৌসুমে লাখেরও বেশি টাকা খরচ করে ৪ বিঘা জমিতে আনারস চাষ করেছেন। ক্যালেন্ডার জাতের আনারস প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ৪০ টাকায়। তবে, আনারসের দাম বাড়লেও তেমন লাভ হচ্ছে না বলে দাবি তার।

আনারস চাষি বিশ্বাস শেখ বলেন, ‘সারের দাম অনুযায়ী আনারসের দাম পোষায় না। গতবারের চেয়ে এবার আনারসের দাম একটু বৃদ্ধি পাওয়ায় তাও বিক্রি করা যাচ্ছে।’

প্রান্তিক চাষিরা বলছেন, ‘আনারস চাষিদের জন্য যদি সারের দামটা একটু কমিয়ে রাখতো তাহলে ভালো হতো। আনারসের যে দাম আর সারের যে দাম এ দামে কৃষকের আসলে পোষায় না।’

ব্যবসায়ীরা বলছেন, টাঙ্গাইলের আনারস চলে যাচ্ছে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। যদিও দাম কিছুটা কম। তবে, বাজারে আমসহ বিভিন্ন ফলের সরবরাহ কমলে দাম বাড়বে আনারসের ।

আনারস ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘আমরা যাতে সঠিকভাবে আনারস বাজারজাত করতে পারি এ বিষয়ে আমাদের সাথে কেউ যোগাযোগ করেনি। এখানে প্রতিদিন ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ আনারস বিক্রি হয়। ব্যাপারী আছেন প্রায় দেড়শোর মতো, আবার খুচরা ব্যাপারীও আছেন প্রায় দেড়শোর মতো।’

মধুপুর গারোবাজারের ইজারাদার জুলহাস উদ্দিন বলেন, ‘আগে আনারস প্রাকৃতিকভাবে পাকতো, এতে ফল মিষ্টি ও সুস্বাদু হতো। কিন্তু এখন ফরমালিন দেয়ার কারণে ফলের গুণগত মান কমে গেছে।’

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জিআই স্বীকৃতি পাওয়া আনারসের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড টেকনোলজি অ্যান্ড নিউট্রিশন সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো. আজিজুল হক বলেন, ‘জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে আমাদের আনারস। সেক্ষেত্রে কৃষির একটা আলাদা স্বীকৃতি এটা। আমরা টাঙ্গাইলবাসীরা জিআই পণ্য বলতে তিনটা আনারস, চমচম ও তাঁতের শাড়ীকে বুঝি।’

জেলা কৃষি কর্মকর্তা বলছেন, আনারস থেকে খাদ্যদ্রব্য তৈরির কারখানা করার পরিকল্পনা আছে তাদের।

উপ-পরিচালক, টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আশেক পারভেজ বলেন, সরকারিভাবে আমাদের আনারসের যে সমস্ত আইটেমগুলো আছে এগুলো নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা আছে সরকারিভাবে এগুলো নিয়ে কাজ করার। যাতে সিজনের সময় প্রচুর আনারস হয়, আর সেগুলোর যথাযথ ব্যবহার হয়।’

চলতি মৌসুমে টাঙ্গাইলে ৭ হাজার ৭৯৪ হেক্টর জমি থেকে ২ লাখ ৭২ হাজার ৭৯০ মেট্রিক টন আনারস উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গারোবাজারের পাশাপাশি জলছত্র, মোটের বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে প্রতিদিন ১৫ লাখ পিসের বেশি আনারস বিক্রি করে তিন কোটি টাকার বেশি বাণিজ্য হয়। এ বছর আনারস বিক্রি করে প্রায় ২০০ কোটি টাকার ব্যবসা হবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

ইএ