স্বামী হারানোর দিন দশেক পরেও শোকের ছায়া থেকে মুক্ত হতে পারছেন না ফরিদা বেগম মুক্তা। দুই সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে এলেন গাজীপুর চান্দনা চৌরাস্তার ঠিক সেই জায়গায়, যেখানে খুন হন তার স্বামী সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন। আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ৮ জন গ্রেপ্তার হলেও নিরাপত্তা শঙ্কায় দিন কাটছে তার।
নিহত সাংবাদিক তুহিনের স্ত্রী ফরিদা বেগম মুক্তা বলেন, ‘আশঙ্কা তো আছেই, ওরা ছাড়া পেলে তো আমাদের বাঁচিয়ে রাখবে না। আমাদের পরিবারের সবাইকে নিঃস্ব করে ফেলবে। আমাদের চাওয়া, ওদের যেন দ্রুত ফাঁসি হয়ে যায়।’
চান্দনা চৌরাস্তার মতোই গাজীপুরের টঙ্গী স্টেশন রোড, টঙ্গী উড়ালসড়ক, কোনাবাড়ী ও জয়দেবপুর এলাকা এখন অপরাধের ‘হটস্পট’। এসব এলাকায় চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত খুন হয়েছেন ৪৩ জন। নগরীর ৮টি থানার মামলার তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের একই সময়ে হত্যাকাণ্ডসহ অন্যান্য অপরাধের পরিমাণ ছিল তুলনামূলক কম।
এসব কারণে সন্ধ্যার পর নিতান্তই জরুরি না হলে, ঘরে থেকে বের হতে চাইছেন না নগরবাসী। অনেকেই দিনের বেলাতেও একাকী চলতে বোধ করছেন শঙ্কা।
গাজীপুর নগরীতে অপরাধের অনুঘটক হিসেবে রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া শতাধিক গার্মেন্টসের বেকার শ্রমিকদের দুষলেন জিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার। সেইসঙ্গে, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে নানা উদ্যোগের কথাও তুলে ধরলেন তিনি।
আরও পড়ুন:
জিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অপরাধীকে আমরা অপরাধী হিসেবেই দেখতে চাই। তাদের কোনো দলীয় পরিচয় কখনোই আমাদের কাছে মুখ্য হয়ে দাঁড়ায় না। কিন্তু এরপরও কিছু বিষয় থাকে, যেমন বর্তমানে অনেক শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে আপনারা জানেন, এর ফলে অনেক লোক বেকার হয়ে গেছে। আমাদের মনে হয়েছে এই বেকারত্বের কারণেও অনেক অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে।’
পুলিশের এমন বাড়তি তৎপরতা মনে করিয়ে দেয়, ফেব্রুয়ারিতে অপারেশন ডেভিল হান্ট নামে গাজীপুরের যৌথবাহিনীর অভিযানের কথা। সে সময়ের অভিযানে, গ্রেপ্তার হন ৩ সহস্রাধিক। তবে আলোচিত অপরাধ ঘটলেই পুলিশি তৎপরতার সমালোচনা করে সুশীল সমাজের এ প্রতিনিধির পরামর্শ টেকসই উদ্যোগে নজর দেয়ার।
গাজীপুর সুশাসনের জন্য নাগরিক-এর সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার শিশির বলেন, ‘এটা কিন্তু মানুষ জানে যে এখানে অপরাধ করে পার পাওয়া যায় এবং যারা অপরাধের পেছনে মূল হোতা, তারা কিন্তু ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। তাছাড়া রাজনৈতিক প্রভাব বা পেশিশক্তির প্রভাব তো রয়েছেই। এ ব্যাপারগুলো নিয়ে আমাদের যে মনো-সামাজিক কাজগুলো করা দরকার মানুষের জন্য সচেতন করার জন্য এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে সত্যিকার অর্থেই মানুষের জন্য কল্যাণকর করতে যে উদ্যোগগুলো গ্রহণ করা দরকার সে, সেগুলো হচ্ছে না।’
গাজীপুর মহানগরের প্রতি ৬ হাজার নাগরিকের জন্য কেবল ১ জন পুলিশ সদস্য থাকায় হতাশা আছে নগরবাসীরও।