অগ্রণীর এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে দুয়ার সার্ভিসেসের লুটপাট, ক্ষতি আড়াইশো কোটি টাকা

অগ্রণী ব্যাংক ভবনের ছবি
ব্যাংকপাড়া
অর্থনীতি
0

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পুরো নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় তৃতীয় একটি পক্ষ। দুয়ার সার্ভিসেস লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানটি লুট করে ব্যাংকের বিপুল অঙ্কের অর্থ। পাশাপাশি ব্যাংকের বিভিন্ন শাখাও পড়েছে বড় ধরনের লোকসানে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুমোদন দেয়ার আগেই দুয়ারের সঙ্গে চুক্তি করেছিল অগ্রণী ব্যাংক। এতে অগ্রণী ব্যাংকের ক্ষতি হয়েছে কমপক্ষে আড়াইশো কোটি টাকা।

রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম দুয়ার। কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুমোদন দেয়ার আগেই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি করে অগ্রণী ব্যাংক।

মতিঝিলের দিলকুশা টাওয়ারে দুয়ারের অফিসটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। লিখা রয়েছে, ব্যাংকের হলিডের কারণেই বন্ধ রয়েছে। যদিও অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে ভিন্ন তথ্য।

রাজধানীর দিলকুশায় জীবনবীমা টাওয়ারে রয়েছে দুয়ারের এজেন্ট ব্যাংকিং সাপোর্ট সেন্টার। সেখানেও ঝুলছে তালা। এলোমেলো পড়ে আছে আসবাব। মাস দুয়েক আগে এজেন্ট পয়েন্ট থেকে গ্রাহকদের ৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে গেছে প্রতিষ্ঠানটির কর্তারা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের পরিবারের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান দুয়ার। অভিযোগ রয়েছে, নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এজেন্ট ব্যাংকিং পরিচালনায় অনিয়মে জড়িয়ে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি, লুট হয় ব্যাংকের বিপুল অঙ্কের টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘দুষ্টু লোকদের কারণে যদি একটি মহৎ কনসেপ্ট বন্ধ করে দেই, এতে ওই দুষ্টু লোকরাই বিজয়ী হবে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, তৃতীয় পক্ষের সফটওয়্যার ব্যবহার, অতিরিক্ত বিল পরিশোধসহ বহু অনিয়মে জড়ায় দুয়ার। এই জালিয়াতিতে নিজ স্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্তে অগ্রণী ব্যাংকের অপচয় হয়েছে কমপক্ষে আড়াইশো কোটি টাকা।

আরও পড়ুন:

অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ বলেন, ‘আমার ব্রাঞ্চ লস করছে, দুয়ার প্রফিট করছে— এ ধরনের গল্প। আমি এটাকে বন্ধ করে দেয়াতে আমার প্রায় ১০০ কোটি টাকার মতো সাশ্রয় হবে।’

বিশেষজ্ঞদের মত, রাজনৈতিক বিবেচনায় এজেন্ট নিয়োগ বন্ধে বাড়াতে হবে তদারকি। দুয়ারের এ কেলেঙ্কারির দায় এড়াতে পারে না অগ্রণী ব্যাংক।

অর্থনীতিবিদ হেলাল আহম্মেদ খান জনি বলেন, ‘তারা কোনোভাবেই এ দায় এড়াতে পারে না। ব্যাংকের নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা না থাকার কারণে অবশ্যই এখানে অনিয়মের একটা সুযোগ থাকে।’ 

ছাত্র-জনতার আন্দোলন পরবর্তী অগ্রণী ব্যাংকের নতুন পর্ষদ গঠন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অগ্রণী ব্যাংকের একাধিক প্রভাবশালী সাবেক পরিচালক দুয়ারের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন। যারা পার্শ্ববর্তী শাখার লেনদেন ইচ্ছাকৃতভাবে এজেন্ট পয়েন্টে নিয়ে আসতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এরই মধ্যে নিজস্ব সফটওয়্যার তৈরি করে নতুন নামে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরুর কথা জানিয়েছে অগ্রণী। তৃতীয়পক্ষের ওপর নির্ভর না হয়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রণেই এবার সেবা পরিচালিত হবে। যদিও কবে নাগাদ এ সেবা মিলবে, তা অনেকটাই অনিশ্চিত।

চালু হওয়ার এক যুগে দেশের এজেন্ট ব্যাংকিং দৃশ্যমান প্রভাব ফেলেছে প্রান্তিক অর্থনীতিতে। গত এক বছরে গ্রাহক সংখ্যা, আমানত বৃদ্ধি, মোট লেনদেন, ঋণ বিতরণ ও প্রবাসীদের রেমিট্যান্স সংগ্রহের সূচকে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে।

এসএইচ