ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিলাম থেকে ৮৫ লাখ টাকায় প্রায় ২৭ টন ফেব্রিক্স কিনেন শাহ আমানত ট্রেডিংয়ের মালিক সেলিম রেজা। নিলামের আগে ইয়ার্ডে কনটেইনারে পণ্যও পরিদর্শন করেন তিনি। এরপর পণ্য ডেলিভারি নিতে মূল্য, শুল্ককর ও বন্দরের চার্জসহ এক কোটি সাত লাখ টাকাও পরিশোধ করেন। অথচ ২৬ ফেব্রুয়ারি ট্রাক নিয়ে বন্দরের সংশ্লিষ্ট ইয়ার্ডে গেলে দিনভর খোঁজাখুজি শেষে জানানো হয় কনটেইনারটি নেই। ছয়মাস চলে গেলেও সেই কনটেইনারের হদিস মেলেনি।
সবশেষ কাস্টমসের নিলাম শাখার চিঠির জবাবে বন্দরের টার্মিনাল অফিসার জানান, আপাতত কনটেইনারটি পাওয়া যাচ্ছে না। টাকা ফেরত পেতে বন্দর ও কাস্টমসে ধরনা দিলেও সুনির্দিষ্ট করে কিছু জানায়নি বন্দর কর্তৃপক্ষ।
ভুক্তভোগী বিডার মো. সেলিম রেজা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা কাস্টমসের কমিশনার বরাবর ৩টি চিঠি দিয়েছি। আমাদের যে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমাদের আর্থিক ক্ষতি ১ কোটি টাকার উপরে। আটকে আছে ৭ মাস ধরে। বারবার চিঠি দেয়ার পরেও আমার টাকা ফেরত পাইনি।’
সম্প্রতি নিলামে বিক্রি করা ৪২ লাখ টাকার কাপড়সহ আরেকটি কনটেইনারের খোঁজ মিলছে না। সবমিলিয়ে দুই কনটেইনার পণ্যের মধ্যে একটি ছয় মাস ও অপরটির খোঁজ মিলছে না প্রায় এক মাস ধরে। এক্ষেত্রে কনটেইনার না থাকলে যাবতীয় চার্জ নিয়ে বন্দর ডেলিভারি অর্ডার কেন দিলো এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিডাররা।
ভুক্তভোগী বিডার মো. ইয়াকুব বলেন, ‘বাহিরে পণ্য থাকলে চুরি হবে কিন্তু বন্দরে এইরকম সুরক্ষিত দেয়ালের ভিতর কিভাবে চুরি হয়। আর্মি, নৌবাহিনী, বন্দরের নিজস্ব সিকিউরিটি থাকার পরেও এ পণ্য কিভাবে বাহিরে যায়।’
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে নিলাম শাখার এই কর্মকর্তা জানান, পণ্যের রক্ষক চট্টগ্রাম বন্দর। বন্দর থেকে কনটেইনার নিখোঁজের চূড়ান্ত চিঠি পেলেই নেয়া হবে অর্থ ফেরতের উদ্যোগ।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার মো. সাকিব হোসেন বলেন, ‘আমাদের কাছে এমন অভিযোগ এসেছে দুইটা। প্রথমে আমরা বন্দরে চিঠি দিয়ে জানতে চাই মালামাল পাওয়া যাচ্ছে কি-না। বন্দর যদি কনফার্ম করে যে পণ্য বুঝিয়ে দেয়া সম্ভব না তখন আমরা রিফান্ডের প্রসেসে চলে যাবো।’
শুধু পণ্য নিখোঁজ নয়, নিলামে বিক্রি করা পণ্য কম পাওয়া এবং ডেলিভারির সময় হয়রানি ও অর্থ দাবির অভিযোগ অন্যান্য বিডারদের।
বিডার মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘পণ্য ডেলেভারি করেছি। আমার এ পণ্যে ৪০ প্যাকেজ লেখা ছিল। ডেলিভারি পর্যায়ে আমি ৩৩ প্যাকেজ পণ্য পায়।’
এসব বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে যোগাযোগ করলেও বক্তব্য মেলেনি। সম্প্রতি বন্দর থেকে জাল ডকুমেন্ট দিয়ে কনটেইনার ডেলিভারি ও আমদানি পণ্য পাচারের সময় হাতেনাতে চারজনকে আটক করে কর্তৃপক্ষ। তবে নিখোঁজ কনটেইনারের হদিস মেলেনি।