রোহিঙ্গাদের জন্য কমছে বিদেশি সহায়তা

চট্টগ্রাম
পরিষেবা
অর্থনীতি
0

বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক সংকট আর ফিলিস্তিন, মধ্যপ্রাচ্যসহ নানা দেশে যুদ্ধের প্রভাব এসে পড়েছে ১২ লাখ রোহিঙ্গার জীবনে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আন্তর্জাতিক বরাদ্দ কমেছে ১৫৯ মিলিয়ন ডলার। ৭ বছরে তাদের ভরণপোষণে বিদেশিদের ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পাশাপাশি শত শত কোটি টাকা খরচ করেছে বাংলাদেশও। প্রশ্ন উঠেছে, তাদের প্রত্যাবাসনের ভবিষ্যৎ নিয়ে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পজুড়ে চোখে পড়ে ছোট ছোট ঝুপড়ি ঘর। বড়জোর ১২-১৫ ফুটের এসব ঘরে বসবাস ৩-৭ জনের এক পরিবারের। দেশি-বিদেশি দান আর অনুদানে চলছে সংসার। পরবাস, কাঁটাতারের বেড়ায় কেমন কাটছে তাদের এ জীবন?

২০১৭ সালে মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয় বাংলাদেশ। সেই থেকে সাড়ে ১২ লাখ রোহিঙ্গার বোঝা বইছে বাংলাদেশ। যথাসাধ্য খরচ করছে অর্থও। পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে সম্পদও। কিন্তু সে তুলনায় বিদেশি দাতা সংস্থাগুলো কতটা কথা রেখেছে? প্রয়োজন অনুযায়ী অনুদান কী পেয়েছে বাংলাদেশ?

২০১৭ সালে তাদের ভরণপোষণের জন্য জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান অর্থ বরাদ্দ চেয়েছিল ৪৩৪ মিলিয়ন ডলার৷ কিন্তু সে বছর বরাদ্দ মিলেছিল ৩১৪ মিলিয়ন ডলার। ঘাটতি ছিল ১১৯ মিলিয়ন ডলার। ​এরপর বছর বছর বেড়েছে ঘাটতির পরিমাণ।

সবশেষ ২০২৩ সালে ঘাটতি ছিল ৩৩৪ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলার। দুই বছরের ব্যবধানে বরাদ্দ কমেছে ১৫৯ মিলিয়ন ডলার। তাহলে কি দাতা সংস্থাগুলো দৃষ্টি ফিরিয়ে নিচ্ছে?

|undefined

শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহামন বলেন, 'তারা ইউক্রেন-রাশিয়া ও ফিলিস্তিন সংঘাতের কথা বলছেন। বিভিন্ন জায়গায় এখন তাদের গুরুত্ব বেড়ে গেছে। সেজন্য আমাদের দিকে তাদের নজরটা একটু কম।'

রোহিঙ্গাদের শীর্ষ অনুদানদাতা যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৩ সালে দেশটি ২১৪ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয়। এরপরই আছে ইউরোপীয়ান কমিশন, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্য। দিনে দিনে ঘাটতি বাড়ায় চাপ বাড়ছে বাংলাদেশের উপর।

রোহিঙ্গাদের সুরক্ষিত করতে প্রায় ১০০ কোটি টাকা খরচে ক্যাম্পের চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া দিতে হয়েছে বাংলাদেশকে। সেসবও নষ্ট করেছে রোহিঙ্গারা। যার মেরামতে আবারও প্রয়োজন হয় অর্থের। এছাড়া উজার হয়েছে প্রায় ১২ হাজার একর বন। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ আড়াই হাজার কোটি টাকা। ভাসানচরে নির্মাণ হয়েছে হাজার কোটি টাকা প্রকল্পের বসতঘর।

মিজানুর রহমান আরও বলেন, 'প্রত্যাবাসন আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। আমরা এ মানুষগুলোকে প্রত্যাবাসিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। তারা যেন নিজ নিজ ভূখণ্ডে ফেরত যেতে পারে। তবে মিয়ানমারের কাছ থেকে আমরা তেমন সাড়া পাইনি।'

এছাড়া অর্থ ও আধিপত্যের বিস্তারে প্রায়ই সংঘর্ষে জড়াচ্ছে রোহিঙ্গারা। মাদক, চোরাচালান, অপহরণ, হত্যার মতো নানান অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে স্থানীয় অর্থনীতি ও জীবন যাত্রায় বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

|undefined

এতকিছুর মাঝেও কেমন আছেন রোহিঙ্গারা? জানতে আমরা যাই বালুখালী ক্যাম্পে। সেখানে কথা হয় মজিবুল্লাহ নামের এক রোহিঙ্গার সাথে। মিয়ানমারের প্রাচুর্যে ভরা জীবন রেখে উদ্বাস্তুর এ জীবন মানতে না পেরে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

তিনি বলেন, 'আমাদের এখানে থাকার ইচ্ছা নাই। আমরা জীবনের নিরাপত্তা পেলে নিজের দেশে ফিরে যাবো। কারণ মিয়ানমারে আমরা নিজ হাতে সবকিছু সাজিয়েছিলাম। সেটা আমাদের জন্মভূমি।'

বারবার প্রত্যাবাসনে উদ্যোগ নেয়া হলেও মিয়ানমারের অনীহায় আটকে আছে সেটি। সম্প্রতি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাত এ পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে।

সবশেষ ২০২২ সালে চীনের মধ্যস্ততায় ৭১১ রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে রাজি হয়েছিল মায়ানমার। কিন্তু নানা জটিলতায় সেটি আলোর মুখ দেখেনি।

দিন দিন বড় হচ্ছে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা। এই বিপুল জনগোষ্ঠী ক্যাম্পগুলোতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেকেই জড়িয়ে পড়ছেন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে। দীর্ঘমেয়াদে এমন পরিস্থিতি আঞ্চলিক শান্তি নষ্ট করতে পারে বলে শঙ্কা করছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা। তাই দ্রুত প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে আঞ্চলিক শক্তিগুলোকে এক সাথে কাজ করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।