আজ (সোমবার, ২৬ মে) দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
‘কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের গৃহীত কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা অবহিতকরণ’ শীর্ষক এ সভার আয়োজন করে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ।
এর আগে সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি চালু ছিল। ২০১৬ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার এ পদ্ধতি বাতিল করে জিপিএ অনুযায়ী শিক্ষার্থী ভর্তির নিয়ম চালু করে। এ নিয়ম বাদ দিয়ে পুনরায় ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি ফেরানো হচ্ছে।
সভায় সচিব খ ম কবিরুল ইসলাম বলেন, ‘কারিগরি শিক্ষার গুণগত মান বাড়ানোর লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা যাচাই করে তাদের ভর্তি নিশ্চিত করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এর ফলে প্রকৃত আগ্রহী ও যোগ্য শিক্ষার্থীরা কারিগরি শিক্ষায় যুক্ত হতে পারবে।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে এসএসসি পাস করলেই সরাসরি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তির সুযোগ রয়েছে। এ ব্যবস্থায় অনেক সময় অপ্রস্তুত বা অনাগ্রহী শিক্ষার্থীরাও ভর্তি হয়, যার প্রভাব কোর্সের ফলাফল ও শিক্ষার মানের ওপর পড়ে। ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শুধু প্রস্তুত ও দক্ষ শিক্ষার্থীদের সুযোগ দেওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রম আরও ফলপ্রসূ হবে। নতুন এ ব্যবস্থা কারিগরি শিক্ষায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবে এবং শিক্ষার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
সভায় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) শামসুর রহমান, অতিরিক্ত সচিব (মাদ্রাসা) মো. সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব (কারিগরি) রেহানা ইয়াছমিন, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শোয়াইব আহমাদ খান, কারিগরি বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. রুহুল আমিন, আইডিইবির আহ্বায়ক প্রকৌশলী কবির হোসেন, সদস্য সচিব প্রকৌশলী কাজী সাখাওয়াত হোসেন, এডুকেশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ইরাব) সভাপতি ফারুক হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক সোলাইমান সালমান প্রমুখ। এছাড়া সভায় কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের ১২ জন প্রতিনিধি অংশ নেন।
সভায় কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের প্রতিনিধি শাহজালাল আহমদ বলেন, আমরা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট। তবে আমাদের দাবিগুলো যাতে সম্পূর্ণরূপে দ্রুত বাস্তবায়িত হয় সেটাই আমরা চাই। এসময় তিনি আরও বলেন, আমরা সচিব স্যারের কথা অমান্য করে কোনো আন্দোলনে যায়নি। তার পরার্মশ অনুযায়ী আমরা থাকতে চাই। স্যারের প্রতি সম্মান অটুট ছিল এবং আগামীতে থাকবে।
এসময় সচিব খ ম কবিরুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কিছু দাবি ইতিমধ্যে বাস্তবায়ন হয়ে গেছে। বাকিগুলোও প্রক্রিয়াধীন। আমরা তাদের সঙ্গে সর্বশেষ সভায় এ আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছিল। এখন প্রত্যাহার করা হয়েছে কিনা সেটা তারা বলবে।’
পরে শাহজালাল আহমদ বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থী ভাইবোনেরা ইতিমধ্যে ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরে গিয়েছে। আমরা স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছি। আমরা আগামীকে সেভাবেই থাকবো। আর জনদুর্ভোগ হয় এমন কোনো কর্মসূচি করবো না।’
ছয় দফা দাবিতে গত ২৯ এপ্রিল থেকে দেশের বেশিরভাগ পলিটেকনিকে তালা ঝুলিয়ে শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনের এক পর্যায়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সড়ক, মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভও করেন। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে তাদের এসব দাবি মানার আশ্বাস দেওয়া হলে তারা অবরোধে থেকে সরে আসেন। এদিকে গত ৭ মে শাটডাউন কর্মসূচি শিথিল করে ক্লাস চালানোর সিদ্ধান্ত নিলেও শিক্ষার্থীরা ফরম পূরণ ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। সর্বশেষ আজ তারা আন্দোলন থেকে পুরোপুরি সরে আসার কথা জানালেন তারা।
তাদের ছয় দফা দাবির মধ্যে এক নম্বর হচ্ছে জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কর্তৃক বাতিল করতে হবে।
দ্বিতীয় দাবি, ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিল করতে হবে। তৃতীয় দাবি, উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (১০ম গ্রেড) থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও যেসব সরকারি, রাষ্ট্রীয়, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
চতুর্থ দাবি, কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব পদে কারিগরি শিক্ষা বহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে।
পঞ্চম দাবি, স্বতন্ত্র 'কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা' মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা ও 'কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন' গঠন করতে হবে। আর ষষ্ঠ দাবি, পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নতমানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
পাশাপাশি নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও ডুয়েটের আওতাভুক্ত একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ সিটে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।