ডাকসু নির্বাচন: প্রশাসনের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ছাত্রদলের, তফসিল চান অন্যরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ভবন
ক্যাম্পাস
শিক্ষা
1

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) সিন্ডিকেটে নির্বাচন কমিশন গঠনসহ বেশকিছু সিদ্ধান্ত হলেও এখনই নির্বাচনের ব্যাপারে আপত্তি ছাত্রদলের। বর্তমান প্রশাসনের অধীনে নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকার অভিযোগ তাদের। আর ছাত্রশিবিরসহ অন্য ছাত্রসংগঠনগুলো দু’এক দিনের মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দাবি জানিয়েছে। এদিকে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো গাফলতি নেই বলে সাফ জানিয়েছেন প্রক্টর।

তিন দশক পর ২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলেও ডাকসু স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়াতেই পারেনি; বরং সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন দ্বারা ছিল প্রভাবিত। তবে আওয়ামী লীগের পতনের পর প্রত্যাশা ছিল লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতিরও পতন হবে। ক্যাম্পাসে প্রতিষ্ঠা হবে শিক্ষার্থীদের সত্যিকারের অধিকার, ডাকসু নির্বাচন ঘিরে স্লোগানে মুখরিত হবে ক্যাম্পাস, তৈরি হবে নতুন নেতৃত্ব।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের যে ঐতিহাসিক নয় দফা, তার একটি ছিল দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদকে কার্যকর করার দাবি। কিন্তু ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ১০ মাস পার হলেও এখনও অকার্যকর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদসহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরই ছাত্র সংসদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনও দফায় দফায় আন্দোলন করেছে ডাকসুর দাবিতে। কেউ কেউ চেয়েছে আগে গঠনতন্ত্রের সংস্কার, তারপর নির্বাচন। ডাকসু নির্বাচন নিয়ে গঠিত কমিশনকে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন গঠনতন্ত্রের বিভিন্ন সংস্কারের প্রস্তাবও দেয়।

অবশেষে গত সোমবার (১৬ জুন) সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদন হয় সংশোধিত গঠনতন্ত্র। এর আগে ডাকসু নির্বাচনে ছয় সদস্যের নির্বাচন কমিশন থাকলেও এবার নির্বাচন পরিচালনায় স্বচ্ছতা, গ্রহণযোগ্যতা ও সার্বিক সহায়তা নিশ্চিত করতে কমিশনের সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ১০ জন করা হয়েছে। উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীমউদ্দিনকে প্রধান রিটানিং কর্মকর্তা করে বাকিদের দায়িত্বও বণ্টনও করা হয়েছে। ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব বলে এদিন গণমাধ্যমকে জানান প্রক্টর।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেটা ওয়ার্কআউট করে দেখেছি তাতে জুলাই মাসের মধ্যেই নির্বাচন করা সম্ভব।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত স্বাগত জানাচ্ছে সব ছাত্র সংগঠনই। গঠনতন্ত্রে ভোটার ও প্রার্থীর বয়সসীমা বেঁধে দেয়ার প্রয়োজন ছিল বলে মনে করছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ। ছাত্রশিবিরও বলছে, ডাকসুর সভাপতির পদকে অলঙ্কারিক পদ হিসেবে রেখে গঠনতন্ত্রে সংশোধন করা যেতো।

ঢাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মহিউদ্দিন খান বলেন, ‘সভাপতির যে কার্যক্ষমতা, সেই কার্যক্ষমতার ব্যাপারে আমাদের প্রস্তাবনা ছিল এটিকে অলংকরিক করা। নির্বাচিত যে ডাকসু প্যানেল আসবে আমরা আসা করবো সেই প্যানেলের মাধ্যমে যে সংস্কার প্রস্তাবনা আমরা দিয়েছি এবং অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলো দিয়েছে তাদের প্রস্তাবনার আলোকে মৌলিক যে সংস্কারগুলো আমরা চেয়েছি সে সংস্কারটা বাস্তবায়িত হবে।’

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ্য সংগঠক হাসিবুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতেই আসলে ছাত্র সংসদ নির্বাচনটা প্রয়োজন।’

জুলাই ঐক্যের সংগঠক মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘এখন যেহেতু নির্বাচন কমিশন গঠন হয়ে গিয়েছে আমরা আশা করবো দুই একদিনের বেতরই ডাকসু নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ তফসিল ঘোষণা করা হবে।’

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের থেকে একেবারে উল্টো অবস্থান ছাত্রদলের। সংগঠনটির দাবি, এখনও ডাকসু নির্বাচনের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি হয়নি।

ঢাবি শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, ‘এই প্রশাসনের আসলে সক্ষমতা নেই ঢাবি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেয়ার। এরকম একটা পরিস্থিতি রেখে আসলেই এ প্রশাসন কোনোভাবেই সুষ্ঠু এবং কার্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করতে সক্ষম না।’

এদিকে প্রক্টর বলছেন, ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরাও নিজেরা ঘুরে ঘুরে দেখি। শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা সেগুলো মিট আপ করার চেষ্টা করছি। আমাদের প্রচেষ্টা আছে। আমরা নিরবচ্ছিন্ন কাজ করছি, আমার টিম কাজ করছে।’

সংশোধিত গঠনতন্ত্রে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোটার ও প্রার্থী হতে হলে শিক্ষার্থীকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণকালীন শিক্ষার্থী হতে হবে।

এসএস