৩২ বছর পর আন্দোলনের মুখে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তফসিল অনুযায়ী ৩১ জুলাই হওয়ার কথা ছিল নির্বাচন। সে অনুযায়ী কার্যক্রমও এগিয়ে নিয়েছিল প্রশাসন। তবে মাঝপথে এসে বাধে বিপত্তি। শুরু থেকেই শিক্ষার্থীরা দাবি তুলে আসছিল, জাকসুর আগেই শেষ করতে হবে জুলাই হামলার বিচার। নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে এলেও সেই বিচার কার্যক্রম শেষ হয়নি। এতে নতুন করে নির্বাচন পেছানোর ঘোষণা দেয় প্রশাসন। যে কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘বিচার এবং নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে কিন্তু বারংবার আমাদের বহুল আকাঙ্ক্ষিত জাকসু নির্বাচন পিছিয়ে দেয়া হয়েছে।’
অন্য একজন বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন যেখানে পেছাতে হচ্ছে না বিচার করার জন্য। সেখানে জাবিতে ঠিক কোন কারণে বিচার প্রক্রিয়া চলার অসুবিধা হবে এজন্য জাকসু হচ্ছে না, এটা আমাদের বোধগম্য না।’
অন্য এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এভাবে মত ঘুরে যাওয়াটা কোনো শিক্ষার্থী পজিটিভলি নেবে না।’
ছাত্র সংগঠনের নেতারা বলছেন, বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতেই বারবার পেছানো হচ্ছে নির্বাচনের দিনক্ষণ। জুলাই-আগস্টে হামলাকারীদের বিচার ও জাকসুকে বাধাগ্রস্ত করলে প্রশাসনের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তারা।
জাবি ছাত্রদলের সদস্য সচিব ওয়াসিম আহমেদ অনিক বলেন, ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আমরা আশাও করতে পারি না। আমরা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড দেখছি না। আমরা দেখছি যে, একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে জেতানোর জন্যই বারবার জাকসু পেছানো হচ্ছে। আমরা এটার তীব্র নিন্দা জানাই।’
জাবি বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, ‘আমরা মনে করি প্রশাসন বিচার নিশ্চিত করতে পুরোপুরি ব্যর্থ। আমরা দেখেছি যে সবসময়ই তারা জাকসু পেছানোর একটা পাঁয়তারা বিভিন্নভাবে করে আসছে।’
জাবি ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কীভাবে আমরা জাকসু বাস্তবায়নের জন্য সহযোগিতা করতে পারি ছাত্র সংগঠনগুলো, সেটার জন্য তারা মিটিংটা ডেকেছিল। সেখানে এক পর্যায়ে গিয়ে যখন আমরা ভিসি স্যারকে প্রশ্ন করি, আমাদের প্রশ্নের মুখে স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে যে, ৩১ জুলাই আমরা জাকসু করছি না।’
এমন অবস্থার জন্য প্রশাসনের সামগ্রিক কোন কর্মপরিকল্পনা না থাকা এবং দূরদর্শিতার অভাবকেই দুষছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
জাবির ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘ছাত্ররা যখন কোনো দাবি নিয়ে যায় তখন তিনি সেটা নিয়ে কথা বলেন। ছাত্রদের বুঝিয়ে বিদায় করে দেন। আবার তিনি তার মতো চলেন, এরকমভাবে চলছে। অর্থাৎ সামগ্রিক কোনো কর্মপরিকল্পনা, সেটা আমি এই প্রশাসনের কাছ থেকে এখনও পর্যন্ত পাইনি।’
অনেকটা একই সুরে কথা বলছে জাবি প্রশাসন। তারা বলছেন, জুলাই-আগস্ট হামলাকারীদের বিচার নিশ্চিতের দাবিসহ বেশকিছু চ্যালেঞ্জের মুখে নির্বাচন পেছাতে বাধ্য হয়েছেন।
জাকসুর সহকারী নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার বলেন, ‘এতবছর ধরে জাকসু না হওয়ার কারণে এর প্রক্রিয়াগত যে কিছু সমস্যা ছিল, সে সমস্যার কারণে আসলে আমরা সঠিকভাবে করতে ভুল করেছি যে, জাকসু নির্বাচনটা ঠিক কবে নাগাদ হতে পারে। জাকসু নির্বাচন যখন ঘোষিত হয় তারপর থেকে আসলে আমরা কতগুলো চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এই চ্যালেঞ্জগুলোকে মোকাবিলা করতে গিয়ে আসলে আমাদের কাছে জাকসু নির্বাচনটা পেছানো অনিবার্য হয়ে গেছে।’
১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠার পর নয়বার অনুষ্ঠিত হয় জাকসু নির্বাচন। ১৯৯৩ সালের ২৯ জুলাই এক ছাত্রের বহিষ্কারকে কেন্দ্র করে ছাত্র ও শিক্ষকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ বাঁধলে সে সময়ের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জাকসু ও হল সংসদ বাতিল করে। শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে দ্রুত জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, এমনটি প্রত্যাশা তাদের।