টিএসসি, হাকিম চত্বর, শ্যাডো কিংবা কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে চায়ের আড্ডা আছে আগের মতোই, চাওয়ালার কাপেও ধোঁয়া ওড়ে একইভাবে। তবে সেই কাপে, সেই চায়ে যুক্ত হয়েছে নতুন ঘ্রাণ, যেখানে চুমুকের সঙ্গে নির্বাচনী আলাপে যোগ হয়েছে নতুন প্রাণ— কারণ এটি শিক্ষার্থীদের নিজেদের নির্বাচন।
৬ বছর পর এমন এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন ও হল সংসদ নির্বাচন হতে চলেছে, যার এক বছর আগেই ঘটে গেছে গণঅভ্যুত্থান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন ব্যবস্থাতে আছে সংকট। ১৮টি আবাসিক হলে মোট শিক্ষার্থীর ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ অবস্থান করলেও সক্ষমতা আরও কম। বড় একটা সংখ্যক শিক্ষার্থীকে থাকতে হয় বাইরেই। এমন জরাজীর্ণ অবস্থা অনেক হলেরই, কোথাও আবার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ।
এছাড়া হল এবং হলের বাইরের ক্যান্টিন ক্যাফেটেরিয়াসহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা খাবারের দোকানের মান ও দাম নিয়েও আছে প্রশ্ন। পড়াশোনা-গবেষণায় নেই কাঙ্ক্ষিত অর্জন।
এমন পরিস্থিতিতে যখন ডাকসু নির্বাচন হতে চলেছে, তখন পড়াশোনার আড্ডার ফাঁকেও চলছে নির্বাচনের গল্প। কারা প্রার্থী? কে এগিয়ে? কত প্যানেল?
আরও পড়ুন:
শিক্ষার্থীরা জানান, গবেষণার ক্ষেত্রে আরও বেশি সুযোগ-সুবিধা চান তারা। হলে আবাসন ব্যবস্থার উন্নতিসহ হলগুলোর খাবারের মানের দিকে নজর দেয়ার জন্য নির্বাচিত প্রার্থীরা পদক্ষেপ নেবেন এমন প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেন অনেকে। আবার শিক্ষক রাজনীতির খারাপ দিক তুলে ধরে, শিক্ষক নিয়োগে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার অঙ্গিকারও চেয়েছেন কেউ কেউ।
হলের ভেতরে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি কিংবা রাজনৈতিক কোনো কার্যক্রম চায় না অনেকেই। কারণ এর দ্বারা তৈরি হওয়া বিগত সরকারের সময় গেস্টরুম-গণরুমের ভয়াবহতা দেখেছে শিক্ষার্থীরা৷
ডাকসু নির্বাচন ঘিরে ইতোমধ্যে অনেক ছাত্র সংগঠনই তাদের ইশতেহার তৈরির কাজ করছে। কিন্তু ইশতেহারে কে কোন বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছে— সে বিষয়গুলোই জানার চেষ্টা করা হয়েছে।
ঢাবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি এস এম ফরহাদ বলেন, ‘ইশতেহার তৈরি হচ্ছে সামগ্রীক ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টের জন্য এবং প্রত্যেককে তার জায়গায় ভালো ব্যক্তিত্ব, ভালো মানুষ হয়ে গড়ে ওঠার জন্য সামগ্রীকভাবে সে সাপোর্টটা দেয়া দরকার, সেই প্রোজেক্টটা বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা আমাদের আছে।’
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) সদস্য সচিব জাহিদ আহসান বলেন, ‘জরিপের ভিত্তিতে আমরা ইশতেহারটা তৈরি করবো, আমরা তাদের কাছে জানতে চাইবো যে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল সমস্যাগুলো কী এবং কী উপায়ে তারা এ সংকট থেকে উত্তরণ চান, সেটি আমরা জানতে চাইবো।’
জাতীয়তাদী ছাত্রদল বলছে, নির্বাচনে অংশ নিলে ইশতেহার দেবে তারাও। আর নির্বাচিত হলে সবার আগে মৌলিক সমস্যাগুলো নিয়ে করবে কাজ।
ঢাবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, ‘কেউ যেন এ আবাসন সংকটের সুযোগ নিয়ে অতীতের মতো গেস্টরুম গণরুমের চর্চা না করতে পারে, একই সঙ্গে কোনো শিক্ষার্থী যেন তার শিক্ষাজীবন শেষ করে বেকারত্বের অভিশাপে আত্মহত্যা না করতে হয়, অপুষ্টিকর খাবারের কারণে কাউকে যেন শারীরিক বিভিন্ন সমস্যায় ভুগতে না হয়, যারা দরিদ্র শিক্ষার্থী— তাদের যেন আর্থিক সংকটের কারণে হীনমন্যতায় ভুগতে না হয় এবং তার শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত না হয়, আমাদের সেই চেষ্টা থাকবে।’