ডাকসু নির্বাচন: প্রচার-প্রচারণায় সরগরম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ভবন
ক্যাম্পাস
শিক্ষা
0

প্রার্থীদের কুশল বিনিময় ও সংবাদ সম্মেলনে সরগরম ডাকসু নির্বাচন। ত্রুটিপূর্ণ প্রার্থীদের রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিসে দৌড়ঝাঁপ। প্রার্থীরা প্রচারণা চালাতে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীদের দ্বারে দ্বারে। নির্বাচনের ইশতেহার তৈরির জন্য সংগ্রহ করছেন শিক্ষার্থীদের মতামত। আজ (শুক্রবার, ২২ আগস্ট) দুপুর গড়াতেই প্রার্থীদের ভিড় বাড়ে চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিসে।

জুম্মার নামাজ শেষে শহীদুল্লাহ হলে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আদিব সহাবস্থানের আহ্বান জানান। এসময় তিনি অভিযোগ করেন, তার বক্তব্য নিয়ে প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে। অন্যদিকে ছাত্রশিবির ভিপি-জিএস প্রার্থীরা জানান, ইসি একপাক্ষিক আচরণ করছে। তাদের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এদিকে, বাগছাসের প্রার্থী বাকের জানান, শিক্ষার্থীদের অধিকার নিশ্চিত করা হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদকে বলা হয় দেশের দ্বিতীয় সংসদ। ডাকসু নির্বাচন প্রতি তাই দেশবাসীর আগ্রহ বেশ। ডাকসু নির্বাচন দেয়ার জন্য ২১ মে থেকে ২৪ মে আন্দোলন ভিসির বাস ভবনের সামনে অনশনে বসে বেশ কিছু ছাত্র। তার মধ্যে অন্যতম ফজলুল হক মুসলিম হলের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহতাব ইসলাম। দাঁড়িয়েছেন কেন্দ্রীয় সদস্য পদে। কিন্তু ত্রুটিপূর্ণ মনোনয়ন পত্র জমা দেয়ায় ডাকসু নির্বাচন থেকে ছিটকে পড়েছেন তিনি। শুধু তিনি নন তার মত ৪৭ প্রার্থী রয়েছে।

জুম্মার নামাজের পর প্রার্থীরা হলে হলে যায় কুশল বিনিময় করতে। এরপর শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে জানানো হয় নানা সমস্যা সমাধানে কথা। বাগছাসের প্যানেলের পক্ষ থেকে ফজলুল হক মুসলিম হলে কুশল বিনিময় শেষে জানানো হয় আবাসিক হলে গড়তে কাজ করবে তারা।

জিএস প্রার্থী আবু বাকের মজুমদার বলেন, ‘প্রতিটা হলে একজন করে এমবিবিএস ডাক্তার যেন মেডিকেল অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। বিশেষত মেয়েদের হলগুলোতে বেশি গাইনি সমস্যায় ভুগেন তারা। আমাদের নির্বাচিত করলে এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করবো আমরা।’

আরও পড়ুন:

শহীদুল্লাহ হলে কুশল বিনিময় শেষে ছাত্রদলের ডাকসুর প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম জানান, ডাকসু নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্যাম্পাসে সকলকে শ্রদ্ধা ভালবাসা নিয়ে সহাবস্থানের আহ্বান জানান। এসময় তিনি অভিযোগ করেন, তার বক্তব্য নিয়ে প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে।

ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম বলেন, ‘মিসইনফরমেশন এবং ডিসইনফরমেশন দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রুপগুলো যে নোংরামি করছে আমি তো চাইলেও এটা করতে পারবো না। এ নোংরামিগুলোর বিপক্ষে আমরা যখন সত্যিকারের পোস্টগুলো দিচ্ছি তখন সেগুলো একসেপ্ট করা হচ্ছে না। সাথে সাথে ডিলিট করে দেয়া হচ্ছে। সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এ বিষয়ে অত্যন্ত কট্টরভাবে অতি দ্রুত সিদ্ধান্ত জানাতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করে কেউ প্রোপাগান্ডা করবে আর তার কোনো আইনি ব্যবস্থা নেবে না সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ার কোনো সুযোগ আমরা দেখি না।’

বিজয় একাত্তর হলে কুশল বিনিময় করে মধুর ক্যান্টিনে কথা বলেন ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম। এসময়, নির্বাচিত হলে বাস সমস্যা নিয়ে চিরস্থায়ী সমাধান করার আশ্বাস দেন । বলেন, ডাকসুর কাজ নেতা তৈরি করা নয়, শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করা। এসময় ডাকসু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে এস এম ফরহাদ অভিযোগ করেন, অর্ধশত ভিডিও দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, এছাড়াও নির্বাচন কমিশন এক পাক্ষিক আচরণ করছে।

ডাকসুর ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম বলেন, ‘ডাকসুর মাধ্যমে আমরা এমন একটি উদাহরণ তৈরি করতে চাই, এমন একটি নিরাপদ ক্যাম্পাস তৈরি করবো এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার সুরক্ষার কথা প্রমাণ করে দেখিয়ে দিয়ে সারা বাংলাদেশে একটি উদাহরণ তৈরি করবো। সারা বাংলাদেশ এ মডেলে চলবে।’

আরও পড়ুন:

ডাকসুর জিএস প্রার্থী ফরহাদ বলেন, ‘আমাদের কমিটমেন্ট এটাই আমরা জয়ী হই বা না হই আমাদের সক্ষমতার বিচারে যে কাজ তা আমরা আমাদের অ্যালামনাই কাজে লাগিয়ে করছি। কিন্তু নির্বাচিত হলে সম্পূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই এবং সরকারের রিসোর্সকে ব্যবহার করে সকল সমস্যা এক বছরের মধ্যে খুব সহজে সমাধান করে ফেলা যাবে। আমাদের ক্যাপাসিটি এবং আমাদের পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা বলে সততার সাথে কাজ করলে এটা সম্ভব।’

ডাকসু নির্বাচনের চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মো. জসীম উদ্দিন জানান, তারা আশাবাদী বাদ পরা ৪৭ জনও শর্ত পূরণ সাপেক্ষে ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।

চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মো. জসীম উদ্দিন বলেন, ‘ক্যান্ডিডেটরা যখন আবেদন করতে আসছে কার কি ভুল তারা জেনে যাচ্ছে। তখন যদি ঠিক করার সুযোগ থাকে তাহলে তারা এসে ঠিক করে দিচ্ছে। কিন্তু বোর্ড যদি মনে করে এ মাইনর ভুলগুলোর জন্য আমরা তাদের মাফ করে দিব তাহলে আমরা সবাইকে নিয়ে নিব। কিন্তু যদি বলে মেজর ভুল আছে, তাকে আমরা নিব না তাহলে তার আবেদন হয়তো বাদ পড়ে যাবে।’

জানা যায়, আগামী ২৪ আগস্ট বৈধ প্রার্থীর নতুন তালিকা প্রকাশ করবে কমিশন। সেই সঙ্গে আচরণ বিধি সম্পর্কে সচেতন থাকার আহ্বান জানান তিনি।

ইএ