ঋতুর দিনপঞ্জিতে বর্ষা ফুরিয়েছে। শরতের নীলাকাশ আর শুভ্র মেঘের দিনগুলোতেও কখনো কখনো বৃষ্টির দেখা মিলছে রাজধানীতে, যা থেকে বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা পানিতে ঘটছে এডিসের বিস্তার।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এ বছর জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা প্রায় ২৭ হাজারের বেশি। প্রায় প্রতিদিনই এ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ১১০ এর বেশি। এছাড়াও প্রতিদিনই হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৃষ্টি আরও কমে গেলে জমে থাকা পানিতে বাড়তে পারে এডিসের বিস্তার।
কীটতত্ববীদ খায়রুল বাশার বলেন, ‘কয়েকদিন পরে যখন বৃষ্টিপাত কমে যাবে, তখন ডেঙ্গু রোগী ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করবে। কারণ তখন এডিস মশার ঘনত্বটা বাড়তে শুরু করবে। ডেঙ্গুর পিক মৌসুম এখনও আসেনি। সঠিকভাবে ম্যানেজ করতে না পারলে আগামী দু’মাসে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।’
শরীরে ডেঙ্গুর ভাইরাস প্রবেশ করলে দ্রুত কমতে থাকে প্লাটিলেট, যা সব ধরনের রোগ প্রতিরোধের সামর্থ্য কমিয়ে দেয়। তাই ডেঙ্গুর লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ নওসাবা নূর বলেন, ‘জ্বর দেখা দিলেই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আমরা ডেঙ্গু ঠেস্টসহ কিছু টেস্ট করে ফেলবো। ডেঙ্গুতে সাধারণত জ্বর থাকে তিন থেকে পাঁচদিন পর্যন্ত। জ্বরটা যেদিন থেকে কমে যায়, সেদিন থেকে আমাদের ক্রিটিকাল পিরিয়ডটা শুরু হয়। এটা দুই থেকে তিন দিনের হয়ে থাকে। ওই সময়টায় মনিটরিং খুব জরুরি।’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ম্যালেরিয়ার মতো পূর্ব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সম্মিলিতভাবে সবগুলো সংস্থাকে একটি ইউনিটের মাধ্যমে কাজ করতে হবে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘কোনো একটা সংস্থা বা হাসপাতাল একা রোগী নিয়ন্ত্রণ বা মশা নিধন করা যায় না। প্রতি বছরই তো একইভাবে চলছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে আমরা নির্দিষ্ট করা উচিত আইডিসিআরের মতো, যারা সমন্বয় করে কাজ করবে।’
ডেঙ্গু এখন আর রাজধানীতে সীমাবদ্ধ নেই। ঢাকার বাইরেও বরিশাল, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহীতেও বেড়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে শহর থেকে গ্রাম, সবপর্যায়ে স্বাস্থ্যসুরক্ষাকে বিকেন্দ্রীকরণ করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।